যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূকে গৃহবন্দী করে স্বামী-ভাসুরের নির্যাতন, ৫ দিন পর উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২

জীবননগর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা দর্শনা থানা এলাকার কন্দিপুর বেলেমাঠে যৌতুকের টাকার দাবীতে গৃহবধূরকি অমানুষিক ভাবে শারিরীক নির্যাতন করে পাঁচ দিন গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্বামী দেলোয়ার হোসেন ও স্বামীর ভাই ভাবিদের বিরুদ্ধে। পরে অসুস্থ গৃহবধূকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
পিত্রি হারা নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনা (২০) দর্শনা থানার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে।
নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনার ভাই শিপন বলেন, ২০২১ সালের প্রথম দিকে পারিবারিকভাবে আমার ছোটবোন সাবিনার সঙ্গে দর্শনা থানার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রামের মৃত আকরাম আলীর ছেলে দেলোয়ারের সাথে ৭০হাজার টাকা দেনমোহর করে তাদের কোনো দাবি -দাওয়া ছাড়াই তাদের বিয়ে হয়।
তবে বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আমার বোন জামাই ও তার পরিবারের লোকজন দোকান দিয়ে ব্যবসা করার জন্য টাকা চেয়ে আমার বোনকে মারধর করতে থাকে। পরে বোনের সুখের জন্য আমরা অনেক কষ্ট করে ধার দেনা করে নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছি। তার কিছু দিন যেতেনা যেতেই সেই আগের মতো আবার সে টাকা দাবি করে আমার বোনতে নির্যাতন করতে শুরু করে।
আমারা তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার বোনকে মারধোর করে খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। এ খবর শুনে আমি প্রথমে দর্শনা থানায় যেয়ে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আমার বোনকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে গেলে তারা পুলিশ ও আমাকে জানায় আমার বোনকে নিতে হলে একবারে তাদের সালে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে তালাক দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।আমারা তখন রাজী না হয়ে ফিরে আসি।
পরে তারা আবার আমাদেরকে খবর দিয়ে আমার বোনকে নিয়ে আসতে বললে আমরা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার বোনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করি।
গৃহবধূ সাবিনা অভিযোগ করে বলেন, তাঁর স্বামী দেলোয়ার যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি টাকা আনতে অপরাগতা জানালে তাঁকে তার স্বামী ও তাঁর ভাই ওসমান, লুকমান, তার দুই ভাসুরের স্ত্রী শারমিন ও মিলি সবাই মিলে মারধর করে এবং খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে পাঁচ দিন যাবৎ আটকিয়ে রাখে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার ভাই ভাবিরা কখনোই আমার স্ত্রীর উপর নির্যাতন কিম্বা যৌতুকের কোনো টাকা পয়সা চাইনি এবং তারাও আমাকে কোনো টাকা দেয়নি। আমার স্ত্রী প্রায়ই আমার কথার অবাধ্য হয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমি নিষেধ করলে সে গলাই দঁড়ি দিতে যায়। এবারও আমি তার বাবার বাড়িতে যেতে মানা করা সত্ত্বেও যখন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে আমি একটা চড় মেরেছি। তাছাড়া আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুক নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, সাবিনার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর কবির বলেন, যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে, এমন কোনো অভিযোগ থানায় এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।