ইবিতে বৈচিত্র সংকটে বোটানিক্যাল গার্ডেন


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, ৫ই ডিসেম্বর ২০২২


ইবিতে বৈচিত্র সংকটে বোটানিক্যাল গার্ডেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন | ছবি: জনবাণী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) পরিবেশগত ভারসাম্য, শিক্ষার্থীদের বিস্তর গবেষণা ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের মফিজ লেক সংলগ্ন এলাকায় ছয় বিঘা জমির উপর প্রায় শতাধিক প্রজাতির গাছ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বোটানিক্যাল গার্ডেন। তবে অযত্ন, অবহেলা ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে দিন দিন বৈচিত্র হারাচ্ছে গার্ডেনটি। যথাযথ পরিচর্যার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গার্ডেনটির প্রাণ সংকটাপন্ন বলেও দাবী করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।


জানা যায়, ২০১৯ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী ক্যাম্পাসের লেক সংলগ্ন এলাকায় চারা গাছ রোপণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ডেনটি উদ্বোধন করেন। ছয় বিঘা জমির উপর প্রায় দশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি তৈরি করা হয়। গার্ডেনটিতে প্রায় শতাধিক প্রজাতির দেশী ও বিদেশী গাছের চারা রোপণ করা হয়। যার মধ্যে সতের প্রজাতির ফুল গাছ, তেরো প্রজাতির ঔষধি ও চার প্রজাতির কাঠ গাছ রোপণ করা হয়। এছাড়া শোভা বর্ধনের জন্য আরো প্রায় ২৩ প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়।


সরেজমিনে দেখা যায়, বোটানিক্যাল গার্ডেনে রোপণ করা বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের বদলে জায়গা করে নিচ্ছে জঙ্গল। অবশিষ্ট বেঁচে থাকা গাছগুলোও আগাছার জন্য বেড়ে উঠতে পারছে না। কেবল অবহেলা আর অযত্নের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিচর্যাহীন মৃতপ্রায় গাছগুলো। গার্ডেনের ভিতরই স্তূপ করে রাখা হয়েছে লেক সংস্কারের কচুরিপানা। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকা থেকে ময়লা আবর্জনা ফেলায় এটি ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে।


গার্ডেনটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও বেশ অপরিকল্পিত। জায়গাটি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই গার্ডেনের ভেতরে পানি জমে থাকে। চারপাশে কোনো বেষ্টনী না থাকায় অরক্ষিত গার্ডেনে প্রায়শই পার্শ্ববর্তী এলাকার শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়। এতে গাছের চারাগুলো তারা অনেক সময়ই ভেঙে ফেলে। তবুও যেন ভ্রূক্ষেপ নেই প্রশাসনের। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের গার্ডেনের গাছপালা পুড়িয়ে সবজি চাষ করার অভিযোগ রয়েছে।


প্রতিষ্ঠাকালীন গার্ডেনটির দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মো: জাকারিয়া রহমান বলেন, 'আমাদের ক্যাম্পাসের মাটি অনেক উর্বর একটু পরিচর্যা করলেই গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠে, কিন্তু বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অনেক গাছ লাগানো হয়েছিল যেগুলো পরিচর্যার অভাবে মারা যাচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কয়েকবার জানিয়েছিলাম কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। 


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার গোলাম মাহফুজ মঞ্জু বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের ঠিকঠাক পরিচর্যা হয়নি। জঙ্গলাকীর্ণ ও মাটির অনুর্বরতার কারণে বেশিরভাগ গাছ মরে গেছে। আমরা গত সপ্তাহে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেছি এবং মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী গাছ লাগানোর ব্যাপারে বন বিভাগের সাথে আলাপ করেছি। ইতোমধ্যে বন বিভাগের প্রতিনিধি দল গার্ডেনটি পরিদর্শন করে গেছেন। অতি শীগ্রই আমরা তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী গাছ লাগানোসহ পানি নিষ্কাশন ও নিয়মিত পরিচর্যার ব্যবস্থা করবো।


এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মফিজ লেক নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে। নানামুখী সমস্যা ও মেগা প্রজেক্টের কারণে এতদিন গার্ডেনটিতে হাত দেওয়া হয়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে, আশা করি কাজ শেষে দৃশ্যমান সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হবে।