হাকালুকি হাওরে অবাধে চলছে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, ৬ই ডিসেম্বর ২০২২


হাকালুকি হাওরে অবাধে চলছে বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার
বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার| ছবি: জনবাণী

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর ‘হাকালুকি’। এটি এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। হাকালুকি হাওরে রয়েছে প্রায় ২৪০টি বিল। বছরের বিভিন্ন সময় এসব বিলকে ঘিরে বিরল প্রজাতির পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও অতিথি পাখিদের সবচেয়ে বড় সমাগমস্থল হাকালুকিতে বিষটোপে ও ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি নিধন করা হচ্ছে। 


এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান খোন্দকার রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, অতিথি পাখিরা হাকালুকিতে যাতে অবাধে চলাফেরা করতে পারে আমরা তার ব্যবস্থা করবো, পাশাপাশি পাখি শিকারের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। এছাড়া হাওরে অবাধে পাখি শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।


সেই ফাঁদে পড়ে অবাধে মারা যাচ্ছে সাধারণ খামারিদের হাঁসও। হাকালুকি হাওরে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পাখি শিকারিরা সবসময় তৎপর থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে অন্ধকারে। পাখি শিকার বন্ধে বন বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কোনভাবেই থামছেনা পাখি শিকার। 


পরিবেশ ও পাখিপ্রেমীসহ স্থানীয়রা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। হাওর পাড়ে বসবাসকারী স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, শীতকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি  পাখিরা। এসব অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত বিলগুলো। 


হাকালুকি হাওরে অসাধু শিকারিরা বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতে হাওরে অতিথি পাখি আসার সাথে সাথে পাখি শিকারিরা তৎপর হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা আরোও জানান, প্রতি বছর শীত প্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি যেমন: গুটি ইগল, বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঞ্জাহাঁস,কাস্তেচরা, ইগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি আসে। 


বিদেশি পাখির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে এ হাকালুকি হাওরে। গত রোববার সরজমিনে কয়েকজন সাংবাদিক হাকালুকি হাওরের তুরলবিলে গেলে বিলের পাশের মহিষ রাখাল বেলাগাও গ্রামের মুজিবুর রহমানের বাসায় বস্তা বন্দী বেশ কিছু পাখি পাওয়া যায়। তখন রাখাল মুজিব বাসায় ছিল না। তাকে ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের নজু মিয়ার ছেলে হোসেন মিয়া বিষটোপ দিয়ে পাখিগুলো ধরে জবাই করে তার বাসায় রাখে। 


সে আরো জানায়, নাগুরা বিলের ইজারাদার ফয়াজ মিয়া সকালে আরো বেশ কিছু জীবিত পাখি শিকারীর হাত থেকে উদ্ধার করে বিলে ছেড়ে দেয়। পরে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাখি শিকারি হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সে পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে বস্তার ভিতরে থাকা পাখিগুলো স্থানীয় কয়েকজন সহ সাংবাদিকরা মিলে বিলের পাড়ে মাটি চাপা দেন। 


পরিবেশকর্মী ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুলাউড়া ইউনিটের সাবেক সভাপতি মোক্তাদির হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীতকাল এলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল ও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে এসব পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেশী আসে। পাখি আসার সাথে সাথে ওৎ পেতে থাকা কিছু অসাধু শিকারীরা প্রতি বছর বিষটোপের পাশাপাশি নানা প্রকার ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করে। বিশেষ করে হাওরখাল, মাইছলা, গজুয়া,নাগুয়া, পিংলা ও বাইয়াবিলে বেশি শিকারের ঘটনা ঘটে। পাখি শিকারিরা রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে বন্দুক ও জাল দিয়ে হাওরে পাখি শিকার করছে। 


বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা পাখি শিকার করে স্থানীয়বিভিন্ন বাজারসহ বাসাবাড়িতে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে। 


পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন,লোকবল সংকটে অনেক সময় পাখি শিকারিদের ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে আমাদের প্রধান অন্তরায় লোকবল সংকট। 


মাঝেমধ্যে আমরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের খবর পাই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগতব্যবস্থা নেওয়া হবে।