বালুচরে স্বপ্ন বুনছেন ফুলবাড়ীর কৃষকেরা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, ৭ই ডিসেম্বর ২০২২
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বিশ্বময়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দেশে এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। তাই বলে কি নদীর বুকে ধূ-ধূ বালুচরে চাষাবাদ সম্ভব? হ্যাঁ, নিজেদের জীবন জীবিকায় টিকে থাকতে অসম্ভবকে সম্ভব করার অদম্য সাহস নিয়ে ধূ-ধূ বালুচরে স্বপ্ন বুনছেন ফুলবাড়ীর কৃষক।
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ফুলবাড়ী। এ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টির গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ধরলা নদী। বয়ে চলার খেয়ালিপনায় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ধরলা কখনো আশীর্বাদ কখনো বা অভিশাপ হিসেবে আভির্ভূত হয়। গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় বন্যা আর ধরলার তীব্র ভাঙনে দূর্যোগ নেমে এসেছে মানুষের জীবন জীবিকায়। বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের কাছে ধরলা এখন অভিশাপ। বর্ষায় টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রতি বছরই ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয় উপজেলার নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের হাজার হাজার বাসিন্দাদের। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেখা দেয় নতুন দূর্যোগ। এবারে আগ্রাসী রূপে হানা দেয় ধরলার তীব্র ভাঙন। ধরলার তীব্র ভাঙনে ফসলি জমি এখন ধূ-ধূ বালুচর। জীবন জীবিকায় টিকে থাকতে বালুচরে চাষাবাদ করে ফসল ফলানোর সংগ্রামে নেমেছেন চরাঞ্চলের অনেক কৃষক। বালুচরেই তারা ভুট্টা, সরিষা,গম ও তামাক চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা নদীর বুকে বালুচরে ভুট্টা, সরিষা ও তামাক চাষাবাদ করছেন। বড়ভিটার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, আমার সব ধানিজমি নদীর পেটে চলে গেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর নদীতে চর পরেছে। আমার আর কোন জমি নাই এখন নিরুপায় হয়ে বালু জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি। একই এলাকার রহমত আলী বলেন, আমার ১০ বিঘা জমির মধ্যে ৯ বিঘাই নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন মাত্র ১ বিঘা জমি আছে। তা ও বালুচর। তাতেই বীজ সার কিনে ভুট্টা চাষাবাদ করছি। তাপস চন্দ্র রায় নামের অপর এক কৃষক বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষকরে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার হাতে কোন টাকা কড়ি নাই। এবারে টোব্যাকো কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রিম ঋণ সুবিধা নিয়ে চরের দুই বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছি।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে জমিতে বালু পড়েছে। সেই জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করছেন। জমিতে বীজ বপনের প্রায় ৩০ দিন হয়েছে। আপাতত খেতের অবস্থা ভালোই দেখা যাচ্ছে।
উপজেলার চরাঞ্চলগুলো ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা হলে অধিকাংশ কৃষক জানান, প্রতিবছর বন্যা ও ধরলার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে জীবন-জীবিকায় টিকে থাকতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। ধরলার করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে নদীর দুই তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, গত বছর ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবারে ভুট্টা চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা ভুট্টা বীজ বপন কাজ শেষ করেছেন। এবং ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষা বীজ বপন করা হয়েছে। রবি মৌসুমে চাষাবাদের বিষয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৯০০ কৃষককে সরিষা বীজ ও সার এবং ৭০০ কৃষককে গম বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
আরএক্স/