পাবনা জেলা পুলিশের অভিযানে ডাকাত দলের ১৩ সদস্য গ্রেফতার


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:০৪ পূর্বাহ্ন, ৯ই ডিসেম্বর ২০২২


পাবনা জেলা পুলিশের অভিযানে ডাকাত দলের ১৩ সদস্য গ্রেফতার
ডাকাত দলের ১৩ সদস্য গ্রেফতার- ছবি: সংগৃহীত

পাবনা জেলা পুলিশ গত ৮ মাসে ৪টি অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। একটি দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তারা এই ১৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পুলিশ বলছে, ডাকাত দল এতই বেপরোয়া ছিল যে, এমন কোন দিন নেই যে তারা চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটায়নি।


এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি ট্রাক, ১ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ডাকাতি করা ৩ টি গরু এবং নগদ ৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।


পাবনা জেলা পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, এ বছরের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ গভীর রাতে ঈশ্বরদী থানার বরইচাড়া গ্রামের একটি গরুর খামার থেকে অস্ত্রের মুখে খামার পরিচর্যাকারী সাগরকে বেধে রেখে ৭টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। এ ঘটনায় ওই দিন পাবনার ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন খামার মালিক মো. হাফিজুর রহমান রনি (৩৪)।


মামলাটি তদন্তকালীন সময়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সুত্রের প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাচাই করে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. মাসুদ আলম, ইন্সপেক্টর জিন্নাত এবং এসআই অসিতের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল ঘটনার ৬ দিনের মাথায় ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এর পরে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে তারা ডাকাত গ্রেফতারে স্বক্ষম হয়।


প্রথম দফায় এ বছরের এপ্রিল মাসে রাজশাহীর কাটাখালি এবং চারঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত সদস্য জাহিদ জয়নাল (৫৫), সাজ্জাদ (২৮) ও শাহীন (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চারঘাট এলাকা থেকে ঈশ্বরদী থানার অন্য একটি চুরি মামলার ৩ টি গরু উদ্ধার করা হয়।


দ্বিতীয় দফায় এ বছরের মে মাসে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে ১ টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়।


গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মো. চিনু মিয়ার ছেলে মো. সামিউল ইসলাম (৩০) এর নামে ডাকাতি সহ মোট ৫ টি মামলা রয়েছে। সামিউল ২ টি ট্রাকের মালিক। তার ট্রাকে করেই মূলত ডাকাতি ও চোরাই গরু পরিবহন করা হয়। গরু ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত তার ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে। সে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এলাকায় ডাকাতির নেতৃত্ব দিয়ে থাকে বলে পুলিশ জানিয়েছে।


গ্রেফতারকৃত গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার মধু মিয়ার ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এর নামে ডাকাতি সহ মোট ২৫ টি মামলা রয়েছে। জাহাঙ্গীর আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকে। গ্রেফতারকৃত অপর ডাকাত সদস্য গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মো. লিমন মিয়া (২২)। সে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক চালক। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ২ টি মামলা রয়েছে।


তৃতীয় দফায় এ বছরের জুলাই মাসে রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাত সর্দার ঈশ্বরদীর আব্দুর রহিম বাবু (২২) কে গ্রেফতার করা হয়। সে গাইবান্ধা, বগুড়া ও গাজীপুর এলাকার ডাকাতদের মধ্যে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করতো। সে কুখ্যাত ডাকাত জাহিদ জয়নালের ছেলে। তার নামে ১০-১২ টি চুরি ও ডাকাতি মামলা রয়েছে। এছাড়াও একই সময় রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার মো. ফরিদ (২০)কে গ্রেফতার করা হয়। ফরিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ৫ টি মামলা রয়েছে।


এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ দফায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও ঈশ্বরদীর খামার থেকে ডাকাতি হওয়া গরুগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ডাকাত সর্দার বাবুকে আটকের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে জানা যায়, গরুগুলো ডাকাতি করে ট্রাকে করে ঈশ্বরদী থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাদের অপর সদস্য কসাই বাদশা, সোহেল, শামীম এবং সুলতানদের নিকট ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়।


যদিও মাত্র ২ লক্ষ টাকা দিয়ে ডাকাত বাবু, সামিউলদের বিদায় করে দেয়। কসাইরা ১০ এপ্রিল ৪ টি গরু জবাই করলেও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় স্থানীয় মৌচাক ফাঁড়ি বাকি ৩ টি গরু উদ্ধার করে প্রকৃত মালিক না পাওয়ায় নিলামের মাধ্যমে ওই ৩টি গরু বিক্রি করে দেন।


পরে এ তথ্যের ভিত্তিতে চতুর্থ ও শেষ দফায় গত ২ ডিসেম্বর ইন্সপেক্টর জিন্নাত এর নেতৃত্বে ডিবির একটি চৌকস দল কালিয়াকৈরে অভিযান পরিচালনা করে বাদশা, সোহেল, সুলতান ও শামীমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে তারা সকলেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


এভাবে পাবনা জেলা পুলিশ গত ৮ মাসে মোট ৪ টি অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১৩ জনকে গ্রেফতার করে ও দূর্র্ধষ ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।