হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে ফারদিন: ডিবি প্রধান

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেছেন, বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ (২৪) অন্তর্মুখী ছিলেন। সবার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে পারতেন না। হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আজ বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এসব কথা বলেন ডিবি প্রধান হারুন।

তিনি বলেন, মৃত্যুর সেই রাতে ফারদিন নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় যাননি। সর্বশেষ তাকে যাত্রাবাড়ীতে দেখা গেছে। সারা রাত এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেছেন তিনি। 

ডিবি প্রধান বলেন বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি আমরা। ফারদিন তার বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেরাণীগঞ্জে নদীর পাড়ে, ব্রিজের ওপর গেছেন। এ সময় অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে আমরা তার সঙ্গে দেখিনি।

তদন্তের বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা যে লেগুনা চালককে গ্রেফতার করেছিলাম, জিজ্ঞাসাবাদে সে কিন্তু বলেছে তাদের লেগুনা চনপাড়ার দিকে যায়নি। কারণ লেগুনা রাত ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে ফারদিনকে নিয়ে গেছে ব্রিজের কাছাকাছি। চনপাড়া যায়নি এটা আমাদের তদন্তে পরিস্কার।

হারুন বলেন, তার রেজাল্ট গ্র্যাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.১৫, তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ হয়। যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতেন না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। তার বান্ধবী বুশরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হতাশায় ভুগছিলেন ফারদিন।

তিনি বলেন, ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর চিকিৎসক যে কথাটি বলেছিলেন সে রকম তথ্য আমরা পাইনি। তার জামা কাপড় ছেঁড়া ছিল না। ধস্তাধস্তি হওয়া বা মারধরের আলামত পাইনি। সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাইনি।

বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, মৃত্যুর রাতে তার ছোটাছুটি, ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়া, হতাশা, মানসিক অবস্থা- সব বিশ্লেষণ করে আপাতত দৃষ্টিতে এটা সুইসাইডাল কেস বলে মনে হচ্ছে ডিবি পুলিশের কাছে।

হারুন বলেন, ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়েছিলেন ফারদিন। সেখানেই ছিল তার সর্বশেষ অবস্থান। এরপর একটা শব্দ হয়েছে (পানিতে পড়ার)। সেখান থেকেই আমরা মনে করছি, এটা সুইসাইড।

হারুন বলেন, ফারদিন নিজে টিউশনি করাতেন ৪টি। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা চালাতেন। নিজের জন্য কিছু করতেন না ফারদিন। তারপরও বাড়ি থেকে শাসন করা হতো। বলা হতো- তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে, হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি, যেটা হয়তো ফারদিন মানতে পারেননি।

জেবি/ আরএইচ/