কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখছে আবহাওয়া প্রকল্প
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ১১:৫৭ অপরাহ্ন, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২২
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। কাজেই নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে সময়মত পৌঁছে দেওয়া কৃষি প্রধান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে প্রতিকূল আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেমন ফসল রক্ষা করা যাবে তেমন অনুকূল আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাবে। সে কারণেই বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারাদেশ ব্যাপি “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প” বাস্তবায়ন করছে।
আইসিটি নির্ভর এই গুরুত্বপূর্ন, স্মার্ট এবং যুগোপযোগী প্রকল্পটি নিম্নলিখিত
ভাবে দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে-
১। কৃষি উৎপাদন টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের কাছে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে
দিয়ে আসছে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের সাথে কৃষকের খাপ
খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আসছে।
২। বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত কৃষি-আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি প্রচলন এবং যথোপযুক্ত তথ্য এবং
উপাত্ত প্রণয়ন করে আসছে।
৩। কৃষি ক্ষেত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কৃষি আবহাওয়া এবং নদ নদীর
সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকের উপযোগী ভাষায় বিভিন্ন সম্প্রসারণ
পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছে।
৪। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণের মাধ্যমে ডিএই’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আসছে।
ফসল উৎপাদন করে কৃষকের লাভবান হওয়া নির্ভর করে মূলতঃ তিনটি বিষয়ের উপর-
ক) সময়মত ও যথাযথ ফসল ব্যবস্থাপনা
খ) ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো
গ) নিরাপদে ফসল কর্তন
প্রকল্পটি উল্লেখিত তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে যথোপযোগী পরামর্শ কৃষকদের প্রদান করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত কৃষকের উপযোগী করে প্রস্তুত করে তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত সপ্তাহে দুইদিন ৬৪ জেলার জন্য এবং একদিন জাতীয় পর্যায়ে কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন তৈরি ও সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক
দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড় ফণী, বুলবুল, বন্যা ও আকস্মিক বন্যা, শৈত্য প্রবাহ, আম্পানসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ) এর আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিন প্রদান করা হয়। বুলেটিনসমূহ নিয়মিত কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টালে আপলোড করা হয় যা প্রকল্পের ওয়বেসাইড এবং বামজি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন
তথ্য পাওয়া যায়। প্রত্যেক জেলার নির্দিষ্ট তারিখের বুলেটিনে আগের চার দিনের উপলব্ধ আবহাওয়ার তথ্য এবং পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস সন্নিবেশিত থাকে। এর পাশাপাশি থাকে জেলাভিত্তিক বস্তিারতি কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ।
প্রকল্পের আওতায় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষক গ্রুপ থেকে কৃষক প্রতিনিধির নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর সম্বলিত ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এ ডাটাবেজে
১৫০০০ সুনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত কৃষক গ্রুপ থেকে ৩০০০০ প্রগতিশীল, কর্মঠ ও নেতৃত্বদানকারী কৃষক প্রতিনিধির তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এসএমএস ও
আইভিআর (ভয়েস ম্যাসেজ)-এর মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে উক্ত কৃষকদরে নিয়মিত অবহিত করা হয়ে থাকে। উল্লেখিত কৃষক প্রতিনিধিগণ প্রাপ্ত তথ্য তাদের গ্রুপের ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য কৃষকদের মাঝে বিস্তার করে থাকেন। কৃষক প্রতিনিধির পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের কাছেও
এসএমএস পৌঁছানো হয়। এ ডাটাবেজে অধিক সংখ্যক কৃষক প্রতনিধিগিণসহ জনপ্রতনিধি, ইলকেট্রনকি ও প্রন্টি মডিয়িার ব্যক্তর্বিগ, বভিন্নি র্ধমীয় উপাসনালয়রে
প্রতিনিধিগণ, ইউনয়িন ডজিটিাল সেন্টারে প্রতিনিধিগণকে অর্ন্তভুক্ত করে একটি কার্যকর হালনাগাদ ডাটাবজে তৈরি করে তথ্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
কৃষি আবহাওয়া বার্তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ মাধ্যম যেমন, বামিজ পোর্টাল, বামিজ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, কিয়স্ক, কৃষক প্রশিক্ষণ, দলীয় সভা, গণ মাধ্যম (রেডিও, টিভি, পত্র- পত্রিকা ইত্যাদি), বিভিন্ন তথ্য-শিক্ষা উপকরণ যেমন: লিফলেট, বুকলেট, ব্রশিউর ইত্যাদি বিতরণ, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, কমিউনিটি রেডিও, ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল, মাইকিং প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য ও কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে কৃষকগণ প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলার পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়ায় করণীয় বিষয়ক তথ্যসমূহ সদ্ব্যবহার করে মাঠের ফসল রক্ষা, অর্থের সাশ্রয় ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন।