দুই তরুণীর সঙ্গে প্রেম, বাসায় ডেকে এক প্রেমিকাকে ‘হত্যা’
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, ৬ই জানুয়ারী ২০২৩
জেসিকা ও আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বিজয় রহমানের। সম্প্রতি অন্য মেয়েকে বিয়ের পরিকল্পনার কথা জানতে পারে জেসিকা। মেয়েটি তাকে কিছু আলাপচারিতার মেসেঞ্জার স্ক্রিনশটও পাঠায়। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার তারা বিজয়ের বাসায় মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যার আগে বাসার ছাদে বসলে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ডানা মেয়েটি ও বিজয় মিলে জেসিকাকে কিলঘুসি ও চাবির ছড়া দিয়ে মেরে জখম করেন। পরে বিজয় গলা চেপে ধরলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে জেসিকা অচেতন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে কয়েকজনের সহযোগিতায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন জেসিকাকে। তবে ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার চালান তারা দু'জন। মুন্সীগঞ্জ শহরের মধ্য কোটগাঁও এলাকায় জেসিকা মাহমুদ (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এমন তথ্য জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুমন দেব।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফুর রহমানের ছেলে বিজয়ের বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত তদন্ত শেষে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে জেসিকার ভাই মো. শাহরিয়ার জিদান বাদী হয়ে বিজয় ও অপর প্রেমিকার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক থেকে দু'জনকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
এর মধ্যে দুই নম্বর আসামিকে বুধবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান ।
জেসিকা মাহমুদ সদরের সাতানিখিল এলাকার সেলিম দেওয়ানের মেয়ে। সে এভিজেএম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। মায়ের সঙ্গে শহরের মধ্য কোটগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বুধবার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে জেসিকার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে বিকেলে সাতানিখিল এলাকার গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, অচেতন অবস্থায় জেসিকাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান বিজয়। তার বাড়ি থেকেই সটকে পড়েন অপর প্রেমিকাও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জেসিকার ভাই জিদানের বন্ধু বিজয়। জেসিকার মৃত্যুর ঘটনায় বিজয় পলাতক থাকায় আটক করা হয়। তার বাবা-মাকে। বুধবার বিকেলে হত্যার রহস্য পাওয়া গেছে।
জানার পর সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। শাহরিয়ার জিদান জানান, মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে ঘুরতে বের হয় জেসিকা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতাল থেকে বিজয় ফোন দিয়ে জানান, জেসিকার অবস্থা খারাপ, ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে। হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি চলে যান। অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওরা বলছে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে, আর হাসপাতালে জানিয়েছে, পড়ে গেছে।
মা রিনা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে অনেক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বিজয়। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।' তবে এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজয়ের পরিবারের কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিজয় ও কয়েকজন মিলে প্রথমে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলা হয়। ঢাকায় রওনা হয়েও সাড়ে ৮টার দিকে তাকে মুন্সীগঞ্জ হাসপাতালে ফেরত আনেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শৈবাল বসাক জানান, মুমূর্ষু অবস্থায় ওই কিশোরীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। পরে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাঁচ তলার ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানায় নিয়ে আসা ছেলেটি। তবে এমন ঘটনা হলে রোগীর মাথায় রক্তক্ষরণের চিহ্ন থাকত, যা এ রোগীর ছিল না। ময়নাতদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে প্রধান আসামি পলাতক। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রেমের বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।