দীর্ঘদিন বন্ধ ইজ্জতপুর রেলওয়ে স্টেশন, খুলে দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রাচীনতম রেলস্টেশন ইজ্জতপুর। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একদিকে রেলওয়েতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন রুট। সংযোজন হচ্ছে ইঞ্জিন ও কোচ। অন্যদিকে কারিগরি জনবল সংকটে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পুরাতন কিছু রেলস্টেশন। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে শ্রীপুর উপজেলার ইজ্জতপুর রেলস্টেশন। জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ বন্ধ থাকায় এটি এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আমলে এ স্টেশন চালু হয়। সে সময় এই এলাকায় অন্য কোনো চলাচলের ব্যবস্থা ছিল না। পায়ে হেঁটে রাজধানী ও জেলার সাথে যোগাযোগ করতে হতো। ট্রেনই ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। বর্তমানেও জেলা শহর অথবা রাজধানীর সাথে যোগাযোগ করতে হলে কোনো জায়গায় ৫ কিলোমিটার, কোনো জায়গায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা অটোরিকশা অথবা পায়ে হেঁটে বাসের রাস্তায় যেতে হয়। গত ১২ বছর আগে এ স্টেশনে ৩টি লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি করতো। বর্তমানে এ স্টেশনে কোনো ট্রেনই যাত্রাবিরতি করে না।স্টেশনটি চালু থাকলে কম সময়ে জেলা শহর এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় সহজে অল্প খরচে রেলের মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়। এই এলাকার ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়ার একমাত্র রাস্তা ছিল রেলপথ।
জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে হঠাৎ করেই ইজ্জতপুর রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এভাবে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রেলস্টেশনের পয়েন্টস ও স্টেশন–সংলগ্ন লেভেল ক্রসিং গেটগুলো। এতে রেলযাত্রী ও সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বেড়েই চলছে।রেলস্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্টেশনটি বন্ধ থাকায় অযত্নে-অবহেলায় স্থাপনাগুলো ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে ঘরগুলো। দীর্ঘদিন স্টেশন বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ। একসময় ৩টি লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি করত এ স্টেশনে। কিন্তু গত ১২ বছর ধরে কোনো ট্রেনই এখানে যাত্রাবিরতি করছে না। জনবল সংকটে দীর্ঘদিন স্টেশনটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। বন্ধ স্টেশন চালুর দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার মানববন্ধনসহ লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। স্টেশনটি চালু হলে কম সময় ও অল্প খরচে জেলা শহর এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত আরও সহজ হতো এলাকাবাসীর।
জয়দেবপুর রেলস্টেশন মাস্টার হারুন অর রশিদ জানান, ইজ্জতপুর স্টেশনটি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে জনবল সংকটের কারণে। সরকার জনবল নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। তাছাড়া ডাবল লাইনের কাজ চলছে, লাইনের কাজ হয়ে গেলে ইজ্জতপুর স্টেশনটি চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, আশপাশের ২৫-৩০টি গ্রামের মানুষ জেলা শহর ও রাজধানীর সাথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল এ স্টেশন। কিন্তু এটি একন বন্ধ থাকায় সহজ ও নিরাপদ যাত্রা বিঘ্নিত হয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিন্দুবাড়ী ইজ্জতপুরসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ মিলে প্রায় পৌনে ৪০০ এলাকাবাসীর স্বাক্ষর সংবলিত একটি লিখিত আবেদন রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর জমা দেন। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে জনমনে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাবাসীর সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এরই মধ্যে স্টেশনটি চালু করতে রেল মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এসএ/