বেতন-ভাতা নিয়ে ক্ষোভ থেকেই জাহাজে ৭ জনকে হত্যা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:২২ অপরাহ্ন, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪


বেতন-ভাতা নিয়ে ক্ষোভ থেকেই জাহাজে ৭ জনকে হত্যা
ছবি: সংগৃহীত

ছুটি নিয়ে মাস্টারের প্রতি ক্ষোভ ও বেতন-ভাতার জের ধরে ৭ জনকে হত্যা করেছে  এমভি আল বাখেরা জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। 


বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন। 


এর আগে চাঁদপুরের জাহাজে সাতজন খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত ইরফানকে মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


আরও পড়ুন: জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার ১


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান জানিয়েছেন, জাহাজের মাস্টারের প্রতি তার খুব ক্ষোভ ছিল। আর সেই ক্ষোভ থেকেই এমন হত্যাকাণ্ড। আকাশের ভাষ্যমতে, তিনি প্রায় ৮ মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছিলেন। সেই জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতেন না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন। এ নিয়ে গ্রেফতারকৃত আকাশের ক্ষোভ ছিল।


শুধু তাই নয়, জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনাকারণে রাগারাগি করতেন এবং কারোর উপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে আকাশ জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতেন না। মাস্টারের এহেন কার্যকলাপের দরুণ আকাশের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিতশিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর আকাশ তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন।


ইরফান গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ড মিশন কীভাবে সফল করেছেন তা জানিয়েছেন র‌্যাবের কাছে। তার ভাষ্যমতে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজস্ব কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেফতারকৃত আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙর করেন। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে তিনটায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনি চিন্তা ভাবনা করেন যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। ফলে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামের এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়ে। পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান। শেষে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।


খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল।


আরও পড়ুন: চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় লোহাগড়ার দুইজন এলাকায় শোকের ছায়া


গত সোমবার দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে এমভি আল–বাখেরা জাহাজ থেকে সাতজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতে হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ মামলা করেন।


এদিকে, জাহাজে খুন হওয়াদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ মঙ্গলবার বিকালে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন ও নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। এসময় সেখানে শোকের আবহ সৃষ্টি হয়।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবে বাবুর্চি রানা কাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।


আরএক্স/