তমব্রু শূণ্য রেখা ক্যাম্পে গোলাগুলি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৩
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র দুইগ্রুপের’ মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৬ টার পর থেকে শুরু হওয়া এ গোলাগুলি এখনো পর্যন্ত (দুপুর সাড়ে ১২ টা) অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন শূণ্য রেখার ক্যাম্পে বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ।
দিল মোহাম্মদ বলেন, “সকালে মিয়ানমারের সশস্ত্রগ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সশস্ত্র গোষ্ঠি সদস্যরা নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়া শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এসে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। পরে তা শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বাংলাদেশের র্যাব বাহিনীর সদস্যরাও গুলিবর্ষণ করে।”
তবে কক্সবাজারস্থ র্যাব ১৫ এর সহকারি পরিচালক (গণমাধ্যম ও আইন) এএসপি মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, তমব্রু সীমান্ত বা তার আশে-পাশে র্যাবের কোন প্রকার অভিযান নেই। সীমান্ত র্যাব অভিযান করার কথাও না।
শূণ্য রেখার ক্যাম্পে বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে, আধিপত্য বিস্তারের জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র দুইগ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কি কারণে এ সংঘর্ষের ঘটনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ”
রোহিঙ্গাদের এ কমিউনিটি নেতা বলেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অব্যাহত এ গোলাগুলির ঘটনায় শূণ্যরেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। অনেকে আশ্রয়শিবিরের ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এতে তারা নানা সংকটে ভ‚গছেন।”
তবে গোলাগুলির এ ঘটনায় হতাহতের আশংকা করা হলেও এখন পর্যন্ত ( সাড়ে ১২ টা) তা নিশ্চিত নন বলে জানান দিল মোহাম্মদ।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে। ওখানে কি হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা চরম আতংকে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ফোনে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের ধমনখালী সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তের কাছা-কাছি বসবাসকারি একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মাদক বা অন্য কোন চোরাই পন্য নিয়ে এক নারী সহ কয়েকজনকে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। যার মধ্যে আরসার এক শীর্ষ নেতার স্ত্রীও ছিল। ঘটনার পর পরই মিয়ানমার থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে কয়েক শত সন্ত্রাসী বিজিবির বিওপিতে টানা আধা ঘন্টার বেশি সময় ধরে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ শুরু করে। পরে আটকদের নিয়ে মিয়ানমারে চলে যান।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়ে ছিলেন, ৫ টা ৪০ মিনিট থেকে আধা ঘন্টাব্যাপী এই গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বালুখালী বিওপি হতে আনুমানিক ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে এবং সীমান্ত পিলার-২০ হতে আনুমানিক ৮০০ গজ উত্তর-পূর্ব কোনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রহমতের বিল হাজীর বাড়ী নামক এলাকায় কতিপয় ইয়াবা ব্যাসায়ী কর্তৃক ইয়াবা চোরাচালানির সময় গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে বালুখালী বিওপির একটি বিশেষ টহল দল অভিযান পরিচালনা করে। বিজিবি টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বিজিবি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি করে। বিজিবি টহল দল তাদের জান মাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থানে থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এতে বিজিবি টহলদলের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোন সদস্য হতাহত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। ঘটনার পর থেকে সকল বিওপি সমুহ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি টহল এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরএক্স/