পবিপ্রবিতে শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে কমিটি গঠন
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, ২০শে জানুয়ারী ২০২৩
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুনর রশিদের কথিত মেয়ে জামাই (শিক্ষক দম্পতির) বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ওই শিক্ষক দম্পতি হলেন- কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নওরোজ জাহান লিপি।
তাদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের গত বছরের ১৯ জানুয়ারির এক পত্রে আনীত অভিযোগের বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে আইন/বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে সকল দালিলিক প্রমাণসহ অবহিত করতে হবে মর্মে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পত্র প্রেরণ করেছিলেন। উক্ত অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর মোঃ ইফতেখারুল আলমকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘটনার কারণ উদঘাটন, দোষী চিহ্নিতকরণ, অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করনীয় নির্ধারণ, সুপারিশ ও সুস্পষ্ট মতামতসহ রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড.মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম চিঠির পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই তদন্ত দশ (১০) কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করা দুরূহ ব্যাপার। প্রতিবেদন জমা দেওয়া সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছি।
জানা যায়, পবিপ্রবিতে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে চাকরিপ্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মণ্ডল। ওই পদে চাকরি দিতে তার কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলাফলে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। দেবাশীষের কাছে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, নওরোজ জাহান লিপি ও শাহীন হোসেন ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। দেবাশীষ যেকোনো মূল্যে ওই চাকরি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে সাক্ষাৎকার বোর্ড অনুষ্ঠানের আগ মুহুর্তে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাড়তি ৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দেবাশীষ ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় ওই চক্রটি রফিক উদ্দিন নামে আরেকজন নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ওই পদে চাকরি দেন। ওই নিয়োগে দেবাশীষ মন্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪। এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দেবাশীষ মন্ডল আত্মহত্যা করেন।
কে এই মনিরুজ্জামান? পবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুনর রশিদের পালিত মেয়ে জামাই এ শিক্ষক ক্যাম্পাসে "জামাই মনির" নামেই অধিক পরিচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সহ সকল বিভাগে একক অধিপত্য বিস্তার করে টক অফ দ্যা ইউনিভার্সিটিতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ড.হারুনর রশিদ ভারপ্রাপ্ত ভিসি থাকাকালীন তার পালিত কন্যা ছাত্রদল নেত্রী নওরোজ জাহান লিপিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পালিত কন্যার স্বামী হিসেবে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছিলেন একক রাজত্ব। নির্দিষ্ট সময়ের দুই বছর আগে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে ছিলেন শশুর ভিসি হওয়ার সুবাদে। সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলেন কৃষি রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ। এছাড়াও তিনি বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য এবং ভিসির একক ক্ষমতা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য পদ পেয়েছিলেন। সাবেক ভিসির সময় সর্বশেষ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়ে নিয়োগ বাণিজ্যকে বাস্তবায়নের প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করেছিলেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান
জেবি/এসবি