চুনারুঘাটে গ্রাম বাংলার গোচারণ ভূমি 'গোপাট' বিলুপ্তির পথে
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, ২৬শে জানুয়ারী ২০২৩
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার গোচারণ ভূমি 'গোপাট' হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় গরু চড়ানোর এমন সুন্দর দৃশ্য গ্রাম বাংলায় দেখা যেতো। গোপাটে রাখাল গরু চরায়, অন্য দিকে হাতের বাঁশির সুরে জানান দিতো রাখালিয়া বুঝি গোচারণ ভূমিতে আছে।
এখন আর সেই রাখালিয়ার বাঁশির সুর শোনা যায় না রাখাল বনে। চাষাবাদে লাঙ্গল জোয়ালে আবদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়ার পর গরুকে ছেড়ে দেয়া হতো গোচারণ ভূমিতে। আনন্দ উল্লাসে, নাচানাচি, ছোটাছুটি করতো মুক্তপ্রাণে। রাখালরা সূর্য উঠার সাথে সাথে নিয়ে যেত গরু চরানোর জন্য গোপাটে, সারাদিন গরুকে গোচারণ ভূমিতে রেখে সন্ধ্যায় গোয়ালে নিয়ে আসা হতো।
একদিকে গোখাদ্য সংকট, গোপাট হচ্ছে বসতি, জায়গা সংকটে কমছে গোচারণ ভূমি। অন্যদিকে বিদেশি গরু লালনপালনে ঝুঁকছে মানুষ, ঘরবন্ধি গরু লালনপালনে ও গরুর শারীরিক সুস্থতায় বৈদ্যুতিক পাখা ও এসি ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে রাখালিয়া গরু লালনপালনে শারীরিক সুস্থতার জন্য গোপাটে গরু চরাতো।
এখন তা আর দেখা যায় না। বলতে গেলে তা হারিয়েই গেছে। উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানে রাস্তা দিয়ে যেতেই একদিন চোখে পড়লো হারিয়ে যাওয়া সেই মনোমুগ্ধকর গরু চরানোর এমন দৃশ্য। এরকম সুশৃঙ্খল 'পরিপাটি' দৃশ্য দেখে মনে অন্যরকম অনুভূতি জেগে উঠে। আবার যদি, এমন দিন ফিরে আসতো! যে দিন যায়, সেই দিন কি আর ফিরে আসবে। কথাটা একদম সত্য! এক রাখালিয়া সন্তু কর্মকার মাথায় ছাতা, হাতে লাটি নিয়ে 'গোপাট' গোচারণ ভূমিতে গরু চরাচ্ছেন।
সচরাচর এমন দৃশ্য এখন গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না। রাখাল সন্তু কর্মকার বলেন, চা বাগানে কাজে নিয়োজিত থেকে গরু লালনপালনে গোচারণ ভূমিতে সকালে গরু নিয়ে যাই, সন্ধ্যায় এই গরু গোয়ালে নিয়ে আসি। উপজেলার বড়জুষ গ্রামের আলিম মিয়া বলেন, একসময় এই উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে গরু লালনপালন করা হতো। তাই গ্রামে গ্রামে গরু চড়ানোর দৃশ্য দেখা যেত। এখন বিদেশি গরুর চাহিদা বাড়ায় ও গরুগুলো গৃহ পরিচর্যা করা হচ্ছে। সেই সাথে বসতি বাড়ায় জায়গা সংকটে গোখাদ্য কমছে এবং গোচারণ ভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। হয়ত এমন দিন আসবে এই 'গোপাট' গোচারণ ভূমি আর নজরেই পড়বে না।
আরএক্স/