জ্বীনের বিরুদ্ধে গৃহবধু অপহরণের অভিযোগ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, ২৭শে জানুয়ারী ২০২৩


জ্বীনের বিরুদ্ধে গৃহবধু অপহরণের অভিযোগ
প্রতীকী ছবি

শশুরবাড়ি থেকে মেয়ে উধাও। ছয়দিনের মাথায় মেয়েকে ফিরে নেওয়ার দাবিতে ছেলের বাড়িতে মেয়ের পরিবারের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষের অবস্থান। এমনটা ঘটেছে জয়পুরহাট সদর থানার বানিয়াপাড়া সরদারপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমার ফেজুর ছেলে শামিম (৩২) এর বাড়িতে। 


এ ঘটনায় মেয়ের বাবা মোকাদ্দেস মন্ডল বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় গত ২১ জানুয়ারী একটি ডায়েরি করেন।


থানার ডায়েরি হতে জানা যায়, ক্ষেতলাল উপজেলার দামগর গ্রামের মোকাদ্দেস মন্ডল এর মেয়ে পারভীন আক্তার মুনি (২৫) ও জয়পুরহাটের বানিয়াপাড়া সরদারপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমার ফেজুর ছেলে শামিম (৩২)। দুজনার ৭-৮ বছর পূর্বে শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং বিবাহ জীবনে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয় যার বয়স চার বছর। গত ২০ জানুয়ারী দিবাগত রাতে শশুর বাড়ি থেকে মেয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে বিষয়টি মেয়ের পরিবার জানতে পারলে থানায় ডায়েরি করেন।


ঘটনার পর থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত মেয়ের কোন সন্ধান না পাওয়ায় আজ ছয়দিনের মাথায়  (২৬ জানুয়ারী) বৃহস্পতিবার সকাল হতেই মেয়ের পরিবারের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ তাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে অবস্থান নেয় মেয়ের শশুর বাড়িতে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 


এবিষয়ে মেয়ের বাবা মোকাদ্দেস মন্ডল বলেন, আমার মেয়ে তার শশুর বাড়ি থেকে প্রায় ছয়দিন হলো নিখোঁজ। আমরা প্রথমে বিষয়টি জানতাম না কিন্তু ঘটনার পরদিন যখন জানতে পারি তখন আমার মেয়ের শশুর বাড়ি আসি এবং বলি আমাদের মেয়ে কোথায়? তখন ছেলের মা জানায় সবাই একসাথে বসে ছিলাম। আপনার মেয়ে দুইটা পান একসাথে খাইছে এবং ঘুম লাগে। পরে সে টয়লেটে যায়। তার ১০ মিনিট পর আমার মেয়ে টয়লেটে গিয়ে দেখে পানি ছেড়ে দেওয়া কেউ নেই কিন্তু বৌমার জুতা ওরনা টয়লেটেই ছিলো। হয়তো মেয়েকে জ্বীন-পরী আঁচড় করে উধাও করে নিয়ে গেছে। আজ বেশ কয়েকদিন হচ্ছে মেয়ের কোন খবর পাচ্ছি না তাই আজ আমরা সবাই এসেছি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে। আমি এ বিষয়ে থানায় ডায়েরিও করেছি। আমি প্রশাসনের মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার চাই।


মেয়ের ছোট বোন মিম জানায়, আমার বোন ছয়দিন ধরে নিখোঁজ কোন খবর পাচ্ছি না তার শশুর বাড়ির লোকজন বলছে আমার বোনকে টয়লেট থেকে জ্বীন-পরী নিয়ে গেছে। আমরা আমার বোন কে ফিরে চাই।


মেয়ের  চাচা তাজমহল বলেন, আমার ভাগনি গত পাঁচ-ছয় দিন থেকে নিখোঁজ। ছেলেবাড়ির লোকজন বলে মেয়েকে নাকি জ্বীন-ভূত নিয়ে গেছে। বাড়ির সকল গেট লাগানো ছিলো আর গেটের তালা ছেলের মায়ের হাতে ছিলো তারা এ কথা আমাদের প্রথম দিন বলেছিলো। তাহলে মেয়ে বাড়ির ভিতর থেকে কিভাবে হারালো? আমরা আমাদের মেয়েকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত চাই।


ছেলের মা ওই মেয়ের শাশুড়ী ছমিলা জানান, ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি প্রায় ৮ বছর।  আমরা এখনো সবাই একভাতেই খাই। আমাদের সংসারে কোন ঝামেলাও নাই। আমার ছেলে ঢাকায় থাকে বৌমা আমাদের সাথে বাড়িতে থাকে। মাঝেমধ্যে ফোনে কথা বলতে দেখি যখন বলি কার সাথে কথা বললে তখন বলে আমার মায়ের সাথে। মেয়ের মা বিদেশে থাকে। ঘটনার দিন আমার ছেলের বউ ঘর থেকে বের হয়ে টয়লেটে যায়। তার ১০ মিনিট পর আমার মেয়েও টয়লেটে যায় গিয়ে দেখে পানি ছাড়া কেউ নাই তখন মেয়ে আমাকে বলে মা ভাবি কই? তখন আমারা খুঁজে দেখি ছেলের বউ নাই। কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ির একজনার উপর জ্বীন ভর করে ওখানে দৌড়ে যাই তখন ওই জ্বীনে ধরা ব্যক্তি বলে তোমারা ওকে দেখতে পাচ্ছে না আমি পাচ্ছি ও তোমাদের আশাপাশেই আছে, গাছের ডালে আছে। তখন মনে করলাম জ্বীন- পরী নিয়ে গেছে। কিন্তু আমার ছেলের বউ গাছে উঠতে পারতো আমার মনে হয় কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো আর রাতে প্রাচীর টপকে তারসাথে ভেগে গেছে আর এখন আমরা বিপদে পড়ে গেছি।


ছেলের বাবা মেয়ের শশুর জানান, আমাদের ছোট সংসার আমাদের মতো ভালো শশুর শাশুড়ী আশপাশে কমই আছে। মেয়েটি টেপের পানি ছেড়ে দেওয়ার এসব অভিনয় করে অন্য কারো সাথে পালিয়ে গেছে।


স্থানীয় বম্বু ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইয়াকুব আলী বলেন, বানিয়াপাড়া গ্রামের শামিমের সাথে মুনির বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে কোন ঝামেলা কখনো শুনিনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটি তার শশুর বাড়ি থেকে নিখোঁজ বিষয়টি আমিও জানি। আজ মেয়ের বাড়ি থেকে এখানে অনেক লোক এসেছে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হচ্ছে আমি দুপক্ষকেই সামলানোর চেষ্টা করতেছি।


জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে মেয়ের পরিবার হতে একটি ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন জিজ্ঞেসাবাদ এর মাধ্যমে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।


আরএক্স/