চট্টগ্রামে হেলে পড়া ভবনটি ড্রেনের ওপর নির্মিত, সিডিএ’র দোষ ঘাড়ে নিচ্ছেন না মালিক
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটে এলাকায় হেলে পড়া ভবনটি ড্রেনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তারা। নালার পাশে হেলে পড়া ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা পরিদর্শনের সময় সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান এ কথা জানান। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের ড্রেনের ওয়ালের ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে স্থাপনা নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তারা তা না মেনে ভবন নির্মান করেছে। তাছাড়া ভবনের নিচেও কোনো ফাউন্ডেশন নেই, তাই ভবনটি হেলে পড়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভবন মালিকরা। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিডিএর প্রধান এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ১৫ ফুটের মধ্যে থাকা সব স্থাপনা দ্রুত অপসারণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ ভবনগুলোর কোনটিরই সিডিএর অনুমোদন নেই। তবে এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে ভবন মালিকরা বলেন, সিডিএর সব নিয়ম মেনেই তারা ভবনটি তৈরি করেছেন। বরং খাল খননে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়ায় ও কাজের গাফিলতির জন্যই ভবন দুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
হেলে পড়া তিনতলা ভবনটি স্বপন বাবুর ও দুইতলা ভবনটি মনোরঞ্জন দাসের। তিনতলা ভবনটি কমপক্ষে এক ফুট খালের দিকে হেলে পেড়েছে। এছাড়া দুইতলা ভবনটিও হেলে পড়েছে। এ ভবনটির নিচে ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া শ্রী শ্রী বিষ্ণু ও জগন্নাথ মন্দির হেলে পড়েছে। মন্দিরটির সামনের নিচের অংশে ফাটল ধরেছে। এর পাশে একতলা ঘরের মাটিতেও ফাটল ধরেছে। কথা বলে জানা গেছে, হেলে পড়া ভবন দুটিতে ৮টির মতো পরিবার থাকত। পরিবারগুলোর অন্তত ৪০ জন সদস্য ভবন হেলে পড়ার পর আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত তিনতলা ভবনের বাসিন্দা রনি দাশ জানান, খালে পাইলিংয়ের কাজ চললেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের ভবনটি নতুন। পর্যাপ্ত সেফটি না থাকার কারণেই কাজ করার সময় আমাদের ভবনটি হেলে পড়েছে। আমাদের ভবন নির্মানের অনুমতির কাগজপত্র আছে। ৪০ লাখ টাকার উপরে ব্যয় করে দুই বছর আগে ভবনটি তৈরি করেছি। এখনও অনেক আত্মীয়-স্বজন টাকা পাবে। আমরা ও চাচারা মিলে চারটি পরিবার বাস করতাম। হেলে পড়ার পর স্বজনদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা ক্ষতিপূরনের দাবি জানাচ্ছি।
সিডিএর অনুমতি আছে ভবন মালিকদের এমন দাবীর প্রসঙ্গে সিডিএর অথরাইজড অফিসার (১) মো. হাসান বলেন, ভবন মালিকরা দাবি করলেও এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমাদের তারা দেখাতে পারেনি। এছাড়া খালের যে এলাইনমেন্ট আছে তার থেকে কমপক্ষে ১৫ ফুট দূরে বাড়ি করার কথা। কিন্তু তা মেনে ভবন দুটি করা হয়নি ।
ক্ষতিপূরনের কোন ব্যবস্থা করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু ভবনদুটো সিডিএর অনুমতি ছাড়া এবং নিয়ম বর্হিভূতভাবে নির্মান করা হয়েছে সুতরাং এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরনের কোন প্রশ্নই আসেনা।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সদরঘাট থানার স্ট্র্যান্ড রোডের আনুমাঝির ঘাট এলাকায় ভবনটি হেলে পড়লে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেন।