অযত্নে অবহেলায় গনগ্রন্থাগার এখন ভূতুড়ে বাড়ি!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, ৩১শে জানুয়ারী ২০২৩


অযত্নে অবহেলায় গনগ্রন্থাগার এখন ভূতুড়ে বাড়ি!
গনগ্রন্থাগার

হবিগঞ্জের এক সময়ের ভাটির রাজধানীখ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। দেশজুড়ে নৌ-বন্দর ও দেশীয় মাছের জন্য সুনামের পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতিতেও ছিলো বেশ সমৃদ্ধ। যেকোনো সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানে সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা নিয়মিত ছিলো।


সেই সুবাদে ১৯৮৫ সালে সরকারি উদ্যোগে সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও খাদ্যগুদাম সংলগ্ন প্রায় দেড় একর জমির উপর নির্মাণ শুরু হয় আজমিরীগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর। পরের বছরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। তারপর থেকেই নিয়মিতভাবে সংস্কৃতি চর্চা, বিভিন্ন প্রখ্যাত লেখকদের লেখা ভাষা আন্দোলন , মুক্তিযোদ্ধের বই সহ বই পড়া এমনকি প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে জাতীয় দিবস পালনসহ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা হতো এই পাবলিক লাইব্রেরীতে নিয়মিত ভাবে।


কিন্তু র্নিমাণের পর কতৃপক্ষের অদেখা আর অবহেলায় সেই কর্মচঞ্চল প্রতিষ্ঠানটি এখন ভুতুরে বাড়িতে পরিনত হয়েছে। এ যেন এক বৃদ্ধ যে কিনা ধ্বংসের প্রহর গুনছে একাকী মৃত্যুর অপেক্ষায়।

 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রথম এবং একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরীটি শুরুর ১০ বছরের মাথায় চালের টিন ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া শুরু হয়। এরপর কোন রকমের সংস্কার না হওয়ায় ১৯৯৮ সালের দিকে এসব কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়, মুখ থুবড়ে পড়ে সকল রকম কর্মকাণ্ড। তারপর কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। কতৃপক্ষ যদি সে সময় থেকে গ্রন্থাগারটি সংস্কারের উদ্যোগ ও একটু শুনজর নিতো তাহলে আজ এমন করুণ দশার মুখোমুখি হতে হতো না।


সরজমিন ও বিভিন্ন একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, বটগাছের ডালপালা ঘিরে রেখেছে পুরো ভবনটি। প্লাস্তার খসে পড়া দেয়াল ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই ভবনটিতে। দেয়াল ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে গাছের লতাপাতা। সাপ বিচ্ছুর বসবাস আর ময়লার ভাঁগাড়ে পরিনিত হয়েছে গণগ্রন্থাগারটি । কতৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ফ্যান, লাইট, আসবাবপত্র ও সংরক্ষিত প্রখ্যাত লেখকদের হাজারো বই এবং মুল্যবান জিনিষপত্র চুরি হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। লোকজনের পদচারণা না থাকায় ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে গণগ্রন্থাগারটি ঘিরে।

 

আজমিরীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক জীবন চন্দ্র চন্দ জানান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলাটি একটি প্রাচীন জনপদ। সাহিত্য সংস্কৃতিতে এ অঞ্চল ছিল সমৃদ্ধ। বর্তমান সরকারের আমলে অবহেলিত ভাটির জনপদে এখন যোগাযোগ ব্যাবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতির তেমন চোখে পড়ার মত উন্নয়ন হয়নি । উপজেলার একমাত্র সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র উপজেলা গণগ্রন্থাগারটি ভেঙ্গে পড়ে আছে । এটি সংস্কার করা হলে ছেলে মেযেরা সাংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী হবে। 


সিনিয়র সংস্কৃতিকর্মী  সৈয়দ জমির উদ্দিন বলেন, গণগ্রন্থাগারটি চালু থাকলে নতুন প্রজন্ম বই পড়াসহ মুক্ত সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী হতো। আমরা চাই এটি সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হোক।

 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান জানান, এটি এখন বিধ্বস্ত এবং এটি সংস্কারের কোন উদ্যোগও আমরা আপাতত নিচ্ছি না।  তবে এই জায়গাটিতে একটি সাংস্কৃতিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা সালেহা সুমী জানান, উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


আরএক্স/