নজরদারিতে নেই চট্টগ্রাম রেলের স্পর্শকাতর এলাকা, আরএনবি নিধিরাম সর্দার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নজরদারিতে নেই চট্টগ্রাম রেলের স্পর্শকাতর এলাকা, আরএনবি নিধিরাম সর্দার

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কেপিআই জোনে হরহামেশাই ঘটছে চুরির ঘটনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এসব জোনের সরকারি সম্পদ রক্ষায় স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগের সীমানা প্রাচীরে ক্লোজ সার্কিট বা সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা ও দাবি থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা করছেন না কর্মকর্তারা। এমনকি বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা কেপিআই জোনের নিরাপত্তায় নেই কোনো ওয়াচ টাওয়ারও। অথচ অনেকটাই ‘অকারণে’ দপ্তরের বিভিন্ন অফিসকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। আবার যে কেপিআইভুক্ত দু-একটি এলাকায় সিসিটিভি আছে তার মনিটরিং পুরোপুরিভাবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে। 

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে সেসব সিসিটিভি মনিটরিং করার সুযোগ না থাকায় চুরি ঠেকাতে কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না এসব সিসিটিভি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কেপিআইভূক্ত এলাকাগুলো হলো সিআরবি কন্ট্রোল, পাহাড়তলী কন্ট্রোল,পাহাড়তলী কারখানা, পাহাড়তলী স্টোর, সিজিপিওয়াই বন্দর। এর মধ্যে পাহাড়তলী কারখানা চৌকির অধীনে ডেমু ট্রেনের ডিজেল চুরি ,লোকোশেডে চুরি, পাহাড়তলী কারখানা সংলগ্ন শেখ রাসেল পার্কে চুরির ঘটনা ঘটে প্রায়ই। চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চুরির ঘটনার পুরো দায় ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) দায়িত্বরত সৈনিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে দিব্যি চলছে কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড। চুরি ঠেকানোর উদ্যোগ না নিয়ে কোনো চুরির ঘটনা ঘটলেই শুরুতে দায়িত্বরত আএনবি সদস্যদের সাময়িক বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই দায় চাপানো। এরপর দফায় দফায় তাদের কপালে জোটে বদলি ও তিরস্কারসহ নানা রকমের শাস্তির খড়গ। 

অথচ রেলওয়ের বিশাল সীমানায় প্রযুক্তির এই যুগে সিসিটিভি মনিটরিং কিংবা ন্যূনতম ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা ছাড়াই প্রয়োজনের অর্ধেক জনবল নিয়ে পাহারা দেওয়া আরএনবির সদস্যরা বলছেন, এভাবে সংকটের মূল জায়গায় সমাধান না করে আরএনবি সদস্যদের উপর দায় চাপিয়ে চুরি তো বন্ধ করা যাচ্ছেই না, তার ওপর আরএনবি সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের বেশি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে দফায় দফায় এমন অনাহুত শাস্তির মুখোমুখি হওয়াটাকে একটা অবিচার হিসেবেই নিচ্ছে তারা। 

সূত্র বলছে, রেলওয়ে কারখানা ও ডিজেল সপের সীমানা প্রাচীরে টপকে সংঘবদ্ধ চোর চক্র প্রবেশ করে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটায়। বিশাল জায়গাজুড়ে ঘন জঙ্গলে ভরা এসব এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকার সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতেই চুরির ঘটনা ঘটায় চোরচক্র। 
সূত্রমতে, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ডেমু শেড এলাকায়, ডিজেল লোকোমোটিভ ইঞ্জিন শেডে, পুরাতন সেল ডিপোতে চুরিসহ কারখানার শেখ রাসেল শিশু পার্ক সংলগ্ন ওয়াল টপকে চুরির ঘটনা সংগঠিত হয়।

সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি ডিজেল সপে চুরির ঘটনায় আরএনবির দুই সদস্যকে দায়িত্ব অবহেলায় ক্লোজ করা হয়। এছাড়া গত বছর চুরি সংক্রান্ত ঘটনাগুলোতে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে আরএনবির মোট ১৫ সদস্যকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়।

সূত্রমতে,পাহাড়তলী কেপিআইভূক্ত এলাকার মধ্যে কারখানা শাখায় ২৬টি, ডিজেল সপে ১৬টি, পাওয়ার হাউজে ১৬টি, নিউ স্টোর ডিপোতে ৩২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও এসব সিসিটিভির মনিটর আরএনবির কাছে নেই। এর ফলে এসব এলাকায় হরহামেশা চুরি হলেও নেওয়া যাচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। 

আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর একরামুল হক সিকদার বলেন, ‘পাহাড়তলী কারখানা চৌকিতে শুধু পাওয়ার হাউজের সিসি ক্যামেরার মনিটর রয়েছে আরএনবির পাহাড়তলী চৌকিতে। কিন্তু কেপিআইভূক্ত কারখানা শাখা ও ডিজেল সপে সিসি ক্যামেরা থাকার পরেও এসব সিসিটিভির চৌকিতে মনিটর সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে সিসিটিভির সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।’ আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর একরামুল হক সিকদার বলেন, ‘আমাদের স্বল্প লোকবল দিয়ে বিশাল এলাকা নিরাপত্তা দিতে হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও চৌকিতে মনিটর থাকায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চুরি ঠেকানো বেশ কঠিনই হচ্ছে। আর চুরির পর যখন অফিসারদের কাছ থেকে ফুটেজ পাওয়া যায়, ততক্ষণে চোরাই মাল হজমও হয়ে যায়।’
অন্যদিকে কেপিআই ভুক্তসিজিপিওয়াই (বন্দর) এলাকায় সিসি ক্যামেরা থাকাটা আবশ্যক হলেও সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই বলে জানান আরএনবির সিআই আমানউল্লাহ আমান। নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে সিসি ক্যামেরার ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকলে চুরির পর নয়, চুরির আগে ব্যবস্থা নেওয়া যেত— এমনটাই দাবি আরএনবি কর্মকর্তাদের। 

তারা বলছেন, অধিকাংশ দপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে এসি চেয়ারে বসে কর্মচারীদের তদারক করার সুবিধার্থে সিসিটিভির মনিটরিং রেখেছেন তাদের হাতে। কিন্তু সরকারি সম্পদ রক্ষায় সীমানা প্রাচীরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রয়োজনই মনে করছেন না তারা। এছাড়া মনিটরিং কন্ট্রোলসহ সবই পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে থাকায় যা কিছু সিসিটিভি আছে সেগুলোও চুরি ঠেকানোতে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না আরএনবি। কিন্তু চুরি হলেই শাস্তি জোটে দায়িত্বপালনরত এ বাহিনীর সদস্যদের। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পাহাড়তলী কারখানার কর্মব্যবস্থাপক রাশেদ লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে ভেবে দেখিনি।’

তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনী কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলাম মৃধা এই সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা বসানো ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি চিঠি দিয়েছি।’ পাহাড়তলী কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার দাশ বলেন, ‘সরকারি মালামাল রক্ষায় আরএনবির সুবিধার্থে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

এসএ/