নওগাঁয় বরই চাষে পাল্টে গেছে লিটনের ভাগ্য


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


নওগাঁয় বরই চাষে পাল্টে গেছে লিটনের ভাগ্য
বিভিন্ন জাতের কুল বা বরই

নওগাঁ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত  গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন উন্নত বিভিন্ন জাতের কুল বা বরই চাষে পাল্টে গেছে তার ভাগ্য। তার বরই বাগান দেখে আগ্রহী হচ্ছে এলাকার অনেক কৃষক। এই এলাকায় তিনিই প্রথম এই বরই চাষ শুরু করেন। জানা গেছে, সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মকমলপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন অভাবের কারনে খুব একটা লেখাপড়া করাহ য়নি। এর পর সংসারের হালধরতে শুরু করেন দিন মুজুরির কাজ। সর্বশেষ কাজ করেন রাজ মিস্ত্রির। 


দুই বছর আগে কৃষি কাজ করার প্রবল ইচ্ছা হয় লিটন হোসেনের। নিজের কোন কৃষি জমি না থাকায় প্রথমে অন্যের জমি লিজ নিয়ে ২বিঘা জমিতে উন্নত জাতের কাশ্মীরিও বল সুন্দরী কুল বা বরই চাষ করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিচর্যায় মাত্র ১১ মাসের মাথায় সবকটি গাছেই থোকায় থোকায় কুল ধরে। প্রথম বছর কুল চাষে সব খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভবান হন তিনি। এই কুল চাষে এক বছরেই কিছুটা পাল্টে যায় লিটনের ভাগ্য। 


এখন ৭ বিঘা জমি জুড়ে তার কুল বা বরই বাগান। এ বছর সব খরচ বাদ ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরই থেকে লাভের আশা করছেন তিনি। এছাড়াও বরই চাষের পাশাপাশি তিনি আরও প্রায় ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেয়েরা ও বিভিন্ন রকম সবজি ও চাষ করছেন। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উন্নত জাতের বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল, নারিকেল এবং টক-মিষ্টি বরই গাছের প্রতিটিতে থোকায় থোকায় কুল বা বরই ঝুলছে। 


ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে প্রতিটি গাছ। সুস্বাদু বাহারি রংয়ের কুল বা বরই তিনি গাছে থেকে পেড়েই বিক্রি করছেন। লিটন হোসেন উন্নত জাতের এসব কুল বা বরই চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার এই বাগানে লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালান ৪-৫জন ছাত্র। এছাড়াও আরও চার-পাঁচ জন মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। লিটনের বরইয়ের বাগান দেখতে এসেছে পাশের এলাকার মাহবুব হাসান,তিনি বলেন শুনলাম লিটন ভাই উন্নত জাতের বরই চাষ করেছে। মূলত এজন্যই এখানে দেখতে এসেছি। 


কি ভাবে সে চাষা বাদক রছে, চাষা বাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে। তার কাছ থেকে দেখে গিয়ে ভবিষ্যতে আমিও এরকম একটি বাগান করার চিন্তা করবো। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র পিয়াস হোসেন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সময় পেলে লিটন ভাইয়ের বাগানে এসে কাজ করি। এতে করে প্রাইভেটের খরচ, স্কুলে যাওয়া আসার ভাড়া সহ আমার যে কোনো কাজে এই টাকা ব্যবহার করি। কৃষক লিটন হোসেন বলেন, দুই বছর আগে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতাম। রাজ মিস্ত্রির কাজ করায় অবস্থায় কৃষি কাজ করার প্রবল ইচ্ছা হয়। ভাব লাম কৃষি কাজের মধ্যে কি করা যায়।পরে চিন্তা করলাম বরই বাগান করি। 


তখন অন্যের ২বিঘা জমি লিজ নিয়ে বরই চাষ শুরু করি। প্রথম বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ বান হই। এর পর আস্তে আস্তে বরই বাগান বৃদ্ধি করি। তিনি আরও বলেন, সব মিলে এবছর ৭ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল, নারিকেল এবং টক-মিষ্টি বরই চাষ করেছি। এতে আমার প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। 


বর্তমান বাজারে ১৪শ টাকা মন বরই বিক্রি হচ্ছে। ইতি মধ্যে ৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। বাজারে এরকম দাম থাকলে আশা করছি ১০লাখ টাকা বরই বিক্রি হবে। ভালো লাভবান হবো। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বরই চাষে খরচ ও রোগ বালাই কম। লিটন হোসেন বলেন, এই বাগান করে নিজের পাশাপাশি কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এজন্য খুবই ভালো লাগে। এছাড়াও আমার বাগান দেখে এই এলাকায় অনেক বাগান গড়ে উঠেছে যা আগে ছিলনা। 


সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন আলী বলেন, লিটন হোসেন ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করেছেন। ভালো ফলন ও হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ১৫শ মনের মত বরই উৎপাদন হতে পারে।  ইতিমধ্যে তিনি ৩লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছে। আরও প্রায় ৭ লাখ টাকার বরই বিক্রি হতে পারে তার এই বাগান থেকে। তার এই বাগান দেখে অনেক কৃষক বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যারা বরই চাষে আগ্রহী তাদের সকলকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে বলে জানান তিনি। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সুত্রে জানাগেছে, জেলায় এ বছর ৪৫৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল বা বরই চাষ হয়েছে।


আরএক্স/