চট্টগ্রামে সড়কে নজর কাড়ছে মা-মেয়ের রেস্টুরেন্ট


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:১২ পূর্বাহ্ন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


চট্টগ্রামে সড়কে নজর কাড়ছে মা-মেয়ের রেস্টুরেন্ট
মা-মেয়ের রেস্টুরেন্ট

লেখাপড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত। এসএসির গন্ডি পার হতে না পারার কষ্ট চেপে আছে তাঁর মনে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হয়তো একটি চাকরি করতে পারতো। লেখাপড়া করতে না পারায় হাতের বিদ্যা দিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। বলছিলাম লায়লা আক্তার রুমার কথা। 


চট্টগ্রাম নগরীর বড়পোল এলাকার মাওলানা সিএনজির অপরপাশে সড়কের উপর দেখা যায় একটি ভাসমান খাবারের দোকান। দোকানে নেই কোন আভিজাত্যের ছোঁয়া। তিন চাকার ভ্যানগাড়ীর উপর দাঁড়িয়ে আছে এই দোকানটি। দোকানের মালিক লায়লা আক্তার রুমা। এই দোকানে তাঁকে সহযোগিতা করছে তার মেয়ে আকলিমা আক্তার বীনা। তিনি আগ্রাবাদ মহীলা কলেজে এইচএসসির ছাত্রী। 


রুমার স্বপ্ন এই দোকান থেকে কিছু সঞ্চয় করে বড় আকারে একটি রেষ্টুরেন্ট দেয়ার। সড়কের উপর মা ও মেয়ের এই দদোকানটি এখন সবার নজর কাড়ছে। মা, মেয়ের স্বপ্নের এই দোকানের নাম দেয়া হয় হাংগ্রী। সুস্বাদু খাবারের ফলে হাংগ্রী নামটি এখন এলাকার প্রায় সকল মানুষের মুখে মুখে। শুরুর দিকে দোকান করা অত সহজ ছিলো না মা এবং মেয়ের। শুনতে হতো এলাকার মানুষদের কটু কথা। 


এই কটুকথায় কান না দিয়ে দুবছর আগে গড়ে তোলা হয় হাংগ্রী নামক ভাসমান এই দোকানটি। মা আর মেয়ের এই দোকানটিই এখন চট্টগ্রামে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্টের মালিক (মা) লায়লা আক্তার রুমা জানান, আমার মেয়েকে পারিবারিক অর্থ সংকটের কারনে বেশি পড়ালেখা করাতে পারিনি কিন্তু বীনা অন্য মেয়েদের মত ঘরে বসে খাওয়ার চিন্তায় থাকে না। 


সে নিজে কিছু একটা করবে বলে অনেক আগে থেকেই চিন্তা করে রেখেছিল। হটাৎ তার মাথায় কি দেখে বুদ্ধি এলো সে আমাকে একটি রেস্টুরেন্ট খোলার কথা বল। তবে, আমাদের পারিবারিক ভাবে অসচ্ছলতার কারনে তা সম্ভব নয় দেখে সে ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট খোলার কথা জানায়। এতে আমি শুধু মাত্র তার সাথে থেকে সহায়তাই করেছি আর বাকি সব অবদান আমার মেয়েরই। 


মেয়ে- আকলিমা আক্তার বীনা জানান, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে দৈনিক হাজারো পেশাজীবি বিভিন্ন কাজে ছুটে আসে। তবে, এই এলাকায় কম দামের মধ্যে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দোকান নেই বললেই চলে সে কথা চিন্তা করে তিনি তার মায়ের সাথে যুক্তি পরামর্শ করে এই ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান দেন। 


তিনি আরো জানান, মূলত পারিবারিক আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি এই খাবারের দোকান করার কথা চিন্তা করে প্রায় আড়াই বছর যাবত প্রতিদিন একই স্থানে এই ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্ট চালিয়ে যাচ্ছেন। আকলিমা আক্তার বীনার মতে, ব্যবসা একটি হালাল জিনিস। ব্যবসার ক্ষেত্রে ছোট বড় তার কাছে কিছুই নেই। তরুণ সমাজের উচিত চাকরীর পেছনে না ঘুরে ছোট পরিসরে হলেও ব্যবসা শুরু করা। তার আশা এখান থেকে তিনি এবং তার মা চট্টগ্রামের বুকে একটি নামকরা রেস্টুরেন্ট তৈরী করবেন। দোকানটির মূল আকর্ষন হলো খাবার। 


ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী করা খাবারই মুগ্ধ করছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে একদিকে মা রান্না করছে অন্যদিকে মেয়ে ক্রেতাদের মাঝে তা পরিবেশন করছে-এমন দৃশ্যই নজর কাড়ছে সবার। কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে চনা, বার্গার, চিকেন ফ্রাই, শীতকালীন পিঠা প্রায় সবকটা আইটেমই পাওয়া যায় এই দোকানটিতে। একটি ভালোমানের রেস্টুরেন্টে যা পাওয়া যায়, তার সবগুলো খাবারই মিলবে ভাসমান এই দোকানে। অবাক করা বিষয় হলো, এসব খাবারের সবকটা আইটেমই তৈরী করা হয় খোদ ক্রেতাদের সামনেই। 


এবিষয়ে সেখানে খেতে উপস্থিত হওয়া কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা এখানে আশপাশে ব্যবসা করি। এখানে অনেক হোটেল, ভাতঘর, নাস্তার দোকান আছে তবে সেগুলোর খাবার ভালো না এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এখানে আমরা নাস্তার অর্ডার দিলে আমাদের সামনেই বানিয়ে দেয়। আবার দুপুরে খাবার সময় দেখি তাদের ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী খাবার গুলোই আমাদের দেওয়া হয়। 


তাদের দোকানে কোনদিন খাবার অবশিষ্ট থাকতে দেখিনি। তাই আমরা প্রতিদিন নতুন খাবারই খেতে পারু। নিত্যদিনের পরিচিত কাস্টমার ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে মা মেয়ের এই দোকানটিতে। এখানে কেউ দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন, কেউবা আবার বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যে যার বাসায়। এভাবেই বিকেল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ক্রেতাদের সরগরমে মুখোরিত থাকে এই দোকানটি।


আরএক্স/