পরিবেশ ও বন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২হাজার গাছ কর্তন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


পরিবেশ ও বন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২হাজার গাছ কর্তন
ছোট বড় প্রায় ২হাজার গাছ কর্তন

রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নে সহকারী জজ আদালতে চলমান মামলা রেখে ভূমি দখলের নামে সরকারের পরিবেশ ও বন আইন অমান্য করে অপরিপক্ষ সহ মূল্যবান ফলজ,বনজ,আকাশি,বেলজিয়াম সহস্রাধিক গাছ কেটে লুট করে নিয়ে গেছে ইন্দেশ্বর টি এন্ড কো: লি:, ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ। 


এসময় আরো ৫শতাধিক অপরিপক্ষ গাছ কেটে ফেলে রাখে তারা। সরজমিনে এমন চিত্র ধারনকালে ফুটে আসে গাছ কর্তনের এমন দৃশ্য।

 

ভূমি দখল ও গাছ কেটে লুট করতে ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ দুই সহস্রাধিক ভাড়াটে সহ বাগান শ্রমিকদেরে সাজিত করে নিয়ে আসে। গাছ কর্তনে বসবাসকারীরা বাগান কর্তৃপক্ষের ভাড়াটে সহ বাগান শ্রমিকদেরে দেশীও অস্ত্রে সাজিত দেখে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ পরিবেশের ক্ষতির সাথে ৭০বছর উর্ধসময় বসবাসকারীদের ফলজ ও বনজ গাছগাছালী প্রকাশ্যে কেটে দিয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সরকারী বরাদ্ধে নির্মান রাস্থা ও মালিকানা জমির কবর স্থান কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। 


ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৩ফেব্রুয়ারি) রাজনগর উপজেলার হলদিগুল গ্রামে। হলদিরগুল গ্রামের মৌলা মিয়া (৬৫), মোস্তফা মিয়া (৬০),ছালিক মিয়া,লয়লু মিয়া, জয়নাল মিয়া ও মৃত মস্তাব মিয়া বাপ দাদার আমল থেকে (৭০বছরের উর্দ্ধে)  ৪একর ৫৪শতক ভূমিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের ১-নং খতিয়ানের জমিতে বসবাস করছেন। বসত ভিটা ছাড়া বাকী জমিতে ফলজ,বনজ,মূল্যবান আকাশি,বেলজিয়াম গাছ রোপন করেন। 


এর মধ্যে কিছু গাছ পরিপক্ষ আর অধিকাংশ গাছ অপরিপক্ষ রয়ে গেছে। কাঁঠাল,আম,জাম,কমলা,আনারস,কলা ফলবান বৃক্ষ ফল দিয়ে যাচ্ছে। আর এই বাগানের ফল বিক্রি করে যে আয় আসে এখানে বসবাসকারী পরিবাররে আয়ের উৎস। ইদানিং ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ এসে হলদিগুল টিজি মৌজার জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানে ৪একর ৫৪শতক জমি সহ আশ পাশের জমি তাদের দাবী করে বসে। 


উত্তরভাগ ইউনিয়ন তৈরী এশিয়ান হাইওয়ের সাথে মিলিত ৪ ফুট প্রস্থ রাস্তা তারা কেটে ফেলে। এমনকি মালিকানা ২৬শতক জমির উপর পুরানো কবর স্থান দখল করে খোদাই করে ফেলে। ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকান্ডে মোস্তফা মিয়া বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সহকারী জজ আদালতে নং-১৪/২০২৩ইং স্বত্ত মামলা দায়ের করেন। 


মামলা পরবর্তীতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অন্তবর্তী কালীন নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করেন। অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা শুনানির দিন ১৩ফেব্রুয়ারি ধার্য ছিল। ঐ দিনই ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ খবর ডেয়ে দিন দুপুরে প্রকাশ্যে হাজারো উর্ধে বাগান ও বহিরাগত ভারাটে নিয়ে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কেটে গাছ লুট কওে নিয়ে যায়। এসময় রাজনগর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনা স্থলে ভবর পেয়ে এসে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে।


এনিয়ে বাগান ও ভারাটে কয়েকজন বলেন- আমরা বাগানের ডাকে এসেছি গাছ কর্তন করে সরিয়ে নিতে। হাতে সবার দা, হকিস্ট্রিক, করাত,লাঠি সোঠাসহ দেশীয় অস্থ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর নেয়নি তারা।


স্খানীয় ভুক্তভোগী নারী/পুরুষ শত শত বলেন- হেনা বেগম, খালেদ আহমদ,শায়েক আহমদ,শামছুদ্দিন,রাশেদ আহমদ বলেন- ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষ অন্যায় ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্থা,পুরাতন কবর স্থান কেটে ফেলে। পরে জমি তাদের প্রমান দিতে না পেরে আবার ভরাট করে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেয়। বর্তমানে অন্যায় ভাবে জমি দখলের উদ্দেশ্যে কয়েক হাজার লোকজন নিয়ে জোর পুর্বক গাছ কেটে লুট ও নষ্ট করে পরিবেশের বিপর্যয়সহ ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সৃ-দৃষ্টির আকুল আবেদন জানিয়েছেন।


রাজনগর থানার এসআই তোফায়েল আহমদ জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে আসি অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে। উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রেখেছি। বাগান বলেছে ভুমি তাদের সেজন্য গাছ কাটছে। আর বসাবাসকারীরা বলেছে ৭০বছরের অধিক বসবাস করছে।


এবিষয়ে শায়েদুর রহমান, সহকারী ম্যানেজার, ইন্দেশ্বর টি এন্ড কো: লি: ইন্দেশ্বর চা বাগান,রাজনগর জানান, এরকম বহু জমি আমাদের বাগানের বেদখল রয়েছে। মামলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সমাধান হচ্ছে না। আমরা দখল মুক্ত করছি। মামলায় ওরা পেলে আমরা ছেড়ে দেবো।

 

গাছ কাটা নিয়ে মোস্তফা মিয়া, (সাদা দাড়ি) বসবাসকারী ও মামলার বাদী বলেন, ইন্দেশ্বর চা বাগান কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকান্ডে মৌলভীবাজার সহকারী জজ আদালতে স্বত্ত মামলা করেছি। মামলা নং-১৪/২০২৩ইং। পরবর্তীতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অন্তবর্তী কালীন নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা জানাই। অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা শুনানির দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য ছিল। ঐ দিনই চা বাগান কর্তৃপক্ষ দেড় দুই হাজার সন্ত্রাসী বাহীনিসহ আমার রোপন করা কয়েক হাজার গাছ প্রকাশ্যে কেটে লুট করে নিয়ে গেছে। আমি অসহায় কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই। আমি আদালতে ও আল্লার দরবারে বিচার চাই।


এবিষয়ে লোকমান চৌধূরী, জেনারেল ম্যনেজার, (বয়স্ক কেপপরিহিত) ইন্দেশ্বর টি এন্ড কো: লি:, ইন্দেশ্বর চা বাগান,রাজনগর জানান,  মৌলা মিয়া গংদের গাছ লাগানো জমি বাগানের। আমরা দখল মুক্ত করছি। অপরিপক্ষ ও পক্ষ, ফলজ গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি নেই নাই। এটা আমাদের ভূল হয়েছে। আগামীতে আর কাটলে অনুমতি নেবো।


আবুবক্কর সিদ্দিক্, সহকারী বনরক্ষক, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার মোঠোফোনে আলাপকালে জানান, যে কোন ব্যক্তি গাছ কাটাতে বন বিভাগের অনুমতি অবশ্যই লাগে। আমার লোক সরেজমিনে গিয়েছে। আগামীকাল আবার যাবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, অবশ্যই মামলা হবে।

 

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সাথে মোঠোফানে আলাপকালে তিনি বলেন, যে কেহ গাছ কাঁটতে হলে বাধ্যতামুলক বনবিভাগ থেকে অনুমোধন নিতে হবে। যদি কেহ আইন অমান্য করে তাহলে বন বিভাগ মামলা করে আইনগত ব্যস্থা নেবে।


সরকারের বন আইনের অনুমোধন না নিয়ে গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে এগিয়ে আসবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।


এসআর/আরএক্স