ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান: অগ্নিকাণ্ডের সাথে বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান: অগ্নিকাণ্ডের সাথে বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান
ফাইল ছবি

শীতের শেষ ও ফাল্গুনের হওয়ার অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়। আগুন থেকে রক্ষায় নেওয়া হয় নানামুখী উদ্যোগ। সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ ও সেমিনার হয়। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এসব উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না। দিনের পর দিন অগ্নিকাণ্ড বেড়েই চলেছে। সম্পদ পুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।


গত বছর রাজধানীসহ সারাদেশে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ১০২টি। এর মধ্যে সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ৪ হাজার। সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড অবশ্য যথারীতি শর্টসার্কিট থেকে। মোট অগ্নিকাণ্ডের ৫৪.৫৬ শতাংশ এই দুই কারণে।


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের  হিসাবে ২০২২ সালে সারাদেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও ৪০৭ জন। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৩ জন।


অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বার্ষিক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ২০২২ সালে সারাদেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। আর উদ্ধার করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ১৮০৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ টাকা। এছাড়া ৯ হাজার ৫১৭টি অগ্নিকাণ্ডের অপারেশনে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


এসব অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে সাধারণ পুরুষ ৭২ জন ও নারী ১৩ জন রয়েছেন। আর অগ্নিনির্বাপণে গিয়ে দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন ১৩ জন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন মোট ৪০৭ জন। এর মধ্যে সাধারণ পুরুষ ৩০৩ জন এবং নারী ৭৪ জন। আর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন ৩০ জন।


প্রতিবেদন আরও বলা হয়, নদীপথসহ পুকুর ও ডোবায় দুর্ঘটনা শিকার হয়ে সাহায্যের জন্য ফায়ার সার্ভিসে কল আসে ১ হাজার ৫৫৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৩৮ জন। আর আহত হয়েছেন ১৪৪ জন। যাদের সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ৫১৪টি দুর্ঘটনার কবল থেকে ৫৩০টি পশু-পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১১ হাজার ৯১১টি অন্যান্য দুর্ঘটনায় জন সাধারণ আহত ১৩ হাজার ১৬৮ জন। আর নিহত ২ হাজার ৫২২ জন। এসব দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন কর্মীও আহত হয়েছেন।


ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬০১টি। ওই বছর বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৭ হাজার ৯৫৫টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। যা সে সময়কার মোট আগুনের ৩৬.৮২ শতাংশ। সে তুলনায় ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে ১৩২০টি। একই ভাবে ২০২১ সালে বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল ৩ হাজার ১৯৩টি। সে তুলনায় ২০২২ সালে এ থেকে অগ্নিকাণ্ড বেড়েছে ৬৮৫টি।


গত বছর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ, স্বেচ্ছাসেবক সতেজকরণ প্রশিক্ষণ, পোশাক শিল্পে প্যাকেজ প্রশিক্ষণ,ফায়ার সেফটি ম্যানেজ কোর্স ও বুনিয়াদি প্রশিক্ষণসহ ৩ হাজার ৫৩২টি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩২০ প্রশিক্ষণার্থী।


২০২২ সালে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নি দুর্ঘটনায় ৭২ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৩ পুরুষ ও ৭৪ নারী। ২০২১ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল পুরুষ ১১৬ জন এবং নারী ১০৩ জন। আহত হয়েছিল পুরুষ ৪১৭ জন আর নারী ১৫৩ জন। ২০২২ সালে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা কমেছে।


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মাইন উদ্দিন বলেন, বৈদ্যুতিক সংযোগে মানহীন ক্যাবলের সহজলভ্য ব্যবহার। সচেতনতার অভাবও রয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ে।


গত সাত বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, অধিকাংশ আগুনের বড় কারণ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। নিম্নমানের তার ব্যবহারের কারণে এটি হয়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৯৯ হাজার ৭৫২টি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের ঘটনা ৩৭ হাজার ৪০৪টি, যা মোট আগুনের ৩৭.৯২০ শতাংশ।