মৌ চাষে ভাগ্যের চাকা সচল
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, ১লা মার্চ ২০২৩
বদিউজ্জামাল (মঙ্গল) লোকে মধু মঙ্গল বলে ডাকেন। কিশোর বয়স থেকে মৌমাছির সঙ্গে তার মধুর সুসম্পর্ক। এজন্য সবাই তার নাম মধু মঙ্গল দিয়েছেন। মধু ও মৌমাছি বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
মৌ চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি আরও অনেক মানুষের ভাগ্য বদল করছেন তিনি। একটি মৌ বাক্স দিয়ে চাষ শুরু করলেও এখন এর সংখ্যা ৫২টি। প্রায় ২২ বছর আগে কৃষি কাজের পাশাপাশি শুরু করে মৌ চাষের সাথে সম্পৃক্ত হন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কুনাগাঁও গ্রামের মঙ্গল মিয়া মধু মঙ্গল।
সরেজমিন ঘুরে মঙ্গল মিয়ার বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির মধ্যে টিন শেডের ঘর করে মধু চাষ করছেন। এর পাশাপাশি ঘরের বারান্দায় ও আঙ্গিনায় মৌ বাক্স রেখেছেন। প্রতি সপ্তাহে একবার বাক্স খুলে পরিচর্যা করেন তিনি। একেকটি বাক্স থেকে বছরে ২ থেকে ৩ বার মধু সংগ্রহ করেন।
মধু চাষি মঙ্গল মিয়ার সাথে কথা হলে জানা যায়, ‘প্রায় ২২ বছর আগে থেকে একটি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ৫২ টি বাক্স আছে। একটি বাক্স থেকে ৩ থেকে ৮ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি মধু ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি করেন। মধু বিক্রি করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। বছরের চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্যমাসে মধু সংগ্রহ করার সুসময় তাই ঐসময়ে আহরন করা হয় বাক্স থেকে নির্দিষ্ট সময়ে।
বাক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন পাহাড় থেকে পোকা ও মধু সংগ্রহ করেন তিনি। মঙ্গল মিয়া মধু চাষের পাশাপাশি অন্যকে মধু চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি মধু চাষের জন্য বাক্স তৈরি করে বিক্রি করেন। একেকটি বাক্স ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা বিক্রি করেন। আর মৌমাছি সহ একটি বাক্স ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি করেন।’
তিনি আরও বলেন, শুধু কুনাগাঁও গ্রামে ১৫০ থেকে ২০০টি মৌ বাক্স আছে। মধু বিক্রি করে এ গ্রামের অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
মঙ্গল মিয়ার সহযোগি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আমি মঙ্গল ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে মৌমাছির বাক্স তৈরি করা হয়। আমি বাক্স তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। আমার নিজস্ব ২২ টি মৌ বাক্স আছে, এগুলি থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করি।’
মঙ্গল মিয়া বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের চেষ্টা করতাম। কিশোর বয়সে বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল থেকে মৌমাছি ও মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করতাম। মধু সংগ্রহ করা আমার নেশা হয়ে গেছে। এ জন্য সবাই আমাকে ভালোবেসে মধু মঙ্গল বলে ডাকে।
এখনও অনেক মানুষ আমাকে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের জন্য ডাকেন। একটু সময় পেলে পাহাড়ে গিয়ে মধু খুঁজি। খাঁটি মধু কেনার জন্য আমার কাছে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসে ভীড় জমায়। অনেকেই আবার মধু কিনে বিদেশে বিক্রি করেন। কয়েকবছর আগে সরকার থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন এনে মৌচাকের জন্য বাক্স বানিয়ে ছিলাম। নতুন করে সহযোগীতা পেলে আরও কিছু বাক্স করা সম্ভব।’