কুলাউড়ায় দেখা মিললো চিরচেনা ‘কুটুম’ পাখির
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা মার্চ ২০২৩
হলদে পাখি, কোনো কোনো অঞ্চলে কুটুম পাখি বা বেনে বউ নামেও পরিচিত। মধুরসুরেলা কণ্ঠের পাখিটি তার নিজের গুণেই মানুষের নজর কাড়ে। বছর জুড়ে এই পাখিটি গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ মাতিয়ে রাখে।
আঙ্গিনার ফুলগাছ, ফলের গাছ, বাঁশঝাড় ও বট গাছের ডালে বসে ডাকাডাকি করে। এ সময় শিশুরা মুখ ভেংচিয়ে খেপায় এবং তাদের সুরের সাথে মেতে উঠে খেলায় । কিন্তু এখন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রকৃতিতে কমেছে এ পাখির সংখ্যা।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার আদমপুর গ্রামের দেখা মেলে হলদে পাখির। তবে অল্প সময়ের মধ্যে আবার চোখের আড়াল হয়ে যায়।
হলদে পাখির বৈজ্ঞানিক নাম ওরিওলিদি এবং ইংরেজি নাম Black-hooded Oriole বা কালোমাথা বেনেবউ। গায়ের পালক উজ্জ্বল হলুদ। এই পাখিটি আকৃতিতে অনেকটা শালিকের মতো। দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার। গায়ের পালক উজ্জ্বল হলুদ। লেজ ও পাখার অগ্রভাগের পালক কালো। গলা ও মাথার রং চিকচিকে কালো হলেও ঠোঁট ও চোখ লাল টকটকে। আর পা দুটো হালকা কালো। এরা সাধারণত ঝোপ-ঝাড়ে, শুকনো ডালপালা, খড়কুটো বা আগাছা দিয়ে গাছের ডালে বাসা বানায়।
বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মৌসুম। সাদা রঙের বাদামি ফোঁটাযুক্ত তিন-চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দুজন মিলে ডিমে তা দিয়ে ১৫ থেকে ১৭ দিনে বাচ্চা ফোটায়। লম্বা ঠোঁটওয়ালা হলদে পাখিটি পোকা-মাকড় ও ফল খায়। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাখিগুলোর বাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপকরণ আমাদের পাক-পাখালি। কিন্তু মানুষের আগ্রাসী আচরণে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজঙ্গল ও দেশীয় গাছ বৃক্ষলতা। ফলে জীববৈচিত্র্যের বড় ক্ষতি হচ্ছে। বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে হলদেসহ দেশীয় প্রজাতির সব পাখি। তবে এরা এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।
পরিবেশে কর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে হলদে পাখি বা বেনেবউ পাওয়া যায়। চিরচেনা এ পাখি বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দিন দিন বিলিন হচ্ছে গ্রামের বাঁশঝাড়, ফলমূলের গাছপালা। ফলে দেশীয় প্রজাতির পাখিদের থাকতে অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হলদে পাখি কাছে থেকে দেখা যেতো। কিন্তু এখন এদের কম দেখা যায়। তাদের সংরক্ষণে সবার সহযোগিতা জরুরি।