ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:০৯ অপরাহ্ন, ৪ঠা মার্চ ২০২৩


ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে
মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল

হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলসহ নানান সামগ্রীর প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার সংস্পর্শে স্টিল প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের ভিড়ে মাটির তৈরী এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।


জানা যায়, একসময়  মৃৎশিল্পের সমৃদ্ধ এক পল্লী ছিল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা-বাগান গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে বছরের বেশিরভাগ সময় তারা মাটির তৈরী  হাড়ি, পাতিল, কলস, বাটিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন মাটির তৈরি সামগ্রী তৈরি করতেন।  তবে সময়ের পরিবর্তনে এখন মৃৎশিল্পীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু সিজনের সময় বানায়। তারা দীপাবলি এলে দীপ বানিয়ে থাকে। তারা এখনো তাদের পুর্বপুরুষদের ধারাটি ধরে রেখেছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধারাটি অব্যাহত থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন এলাকাবাসী।


উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা যমুনা যাদব (৯০) জানান, আমার পাশের বাড়ির আমার বন্ধু এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিলো। সে মারা যাবার পর তার ছেলে বিরিজলাল কুমার(৪৮) এই শিল্পের সাথে এখনো জড়িত আছে। বিরিজলাল বড় বড় হাড়ি পাতিল, দীপসহ নানানরকম সৌখিন সামগ্রী বানিয়ে থাকেন।


একসময় বৈশাখের আগে খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন মৃৎশিল্পিরা।  বৈশাখ এলেই পুতুল, টাকা রাখার ব্যাংক,ঘোড়া, গাড়ি, দীপসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মাটির সামগ্রী বিভিন্ন মেলার দেখা যেত। তবে এখন আর সেই দৃশ্য সহজে চোঁখে ধরা পড়ে না।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে বাজারে এখন মাটির জিনিসপত্রের আগের মতো চাহিদা না থাকায়  অল্প কিছু কলস, বাটি, পুজার নিত্যসামগ্রী বাজারে  বিক্রি করছেন বিক্রেতারা । বিক্রেতারা জানান দিন দিন এর চাহিদে কমছেই।


মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ফুড বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ আশরাফুল শেখ জানান, খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রেখে স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে মাটির পাত্র। অন্যান্য উপাদানের তৈজস দিয়ে যেটা সম্ভব নয়।


মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিসের চেয়ে মেলামাইন, প্লাস্টিকের দিকে বেশি ঝুকছে। মৃৎশিল্পের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এই শিল্পকে বাচিয়ে রাখা প্রয়োজন।


আরএক্স/