ফেসবুকে মেয়ে সেজে ছেলেদের সাথে সমকামিতা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, ৫ই মার্চ ২০২৩


ফেসবুকে মেয়ে সেজে ছেলেদের সাথে সমকামিতা
কিশোর নোপেল।

আঠারো বছরের নোপেল প্রাকৃতিক কারণেই ছেলে হয়েও মেয়েলি স্বভাবের। এই স্বভাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময় আসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন আহমেদের ছেলে এই কিশোর নোপেল। ফেসবুকে তার আইডি নাম আনিসা আক্তার ছোয়া (আরিয়ানের পরি)।


এ বিষয়ে কথা হলে নোপেলের পিতা স্বপন জানান, তার ছেলে ছোট বেলা থেকেই মেয়েলি স্বভাবের। সে মেয়েদের সাথে মিশতে এবং মেয়েদের মত সাজসজ্জা করতে ভালোবাসে। এ নিয়ে আমরা তাকে অনেক শাসন করেছি। তাকে ঠিকমত বাসা থেকেও বের হতে দেওয়া হয়না। পরে আমরা তাকে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তাকে রিহ্যাবেও দিয়েছিলাম, তারপরও কোন পরিবর্তন আসেনি। আমরা এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি।


জানা যায়, নোপেল শারিরীক গঠনে পুরুষ হলেও সে হিজড়া প্রকৃতির। বিভিন্ন সময়ে মেয়ে সেজে ছেলেদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিভিন্ন বন্ধু ও পরিচিত-অপরিচিত ছেলেদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। পরে শারীরিক (সমকামিতা) সম্পর্কে জড়ায়। দীর্ঘদিন যাবত এমন কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে আসছে বলে লোকমুখে শুনা গেছে। 


বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাতে ইয়াসিন নামে এক যুবক সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে নোপেলের বাসায় আসে। এই খবর এলাকার যুবকদের কাছে পৌঁছালে নোমান নামে নোপেলের একসহ কয়েকজন যুবক নোপেলের বাড়ির ছাদে গিয়ে নোপেল (সমকামি) ও ইয়াসিনকে অশ্লীল অবস্থায় ধরে ফেলে। এসময় নোপেল ও ইয়াসিন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে এবং এসব কাজ করবেনা বলে অঙ্গীকার করে। এসময় ঐ যুবকেরা তাদের দুজনকে চর-থাপ্পর দেয়।


উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইয়াসিনের মামাতো ভাই সাঈদুর রহমান সাঈদ তার লোকজন এলাকায় মহড়া দিয়ে নোমানদের খুজতে থাকে। বিষয়টি নোমানের পিতা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর হুমায়ুন কবির এলাকার মেম্বার আলাউদ্দিন প্রধানকে জানালে আলাউদ্দিন প্রধান এর বিচার-শালিসের মাধ্যমে সমাধান করবে বলে সাঈদ ও তার লোকজনকে জানিয়ে দেয়। 


শুক্রবার (৩ মার্চ) রাত ৯ টায় শালিসের সময় নির্ধারণ করা হলে এর আগেই নোমান ও তার বন্ধুদের উপর হামলা করে সাইদ গ্রুপ। এ ঘটনায় নোমানের পিতা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর হুমায়ুন কবির সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।


আহত নোমানের পিতা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে জানায়, সাইদ তার লোকজন নিয়ে দেশী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকে এবং আমাকে প্রকাশ্যে হাত-পা ভেঙে খুন ও গুম করার হুমকি দিতে থাকে। আমার বড় ছেলে সাঈদের কাছে গিয়ে হুমকি প্রদানের কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে সাঈদের লোকজন আমার ছেলের উপর আক্রমন করে।


এ বিষয়ে কদমতলী এলাকার সাবেক মেম্বার আলাউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় আমরা দুই এলাকার মুরব্বিরা বসে বিষয়টি বিচার-শালিসের মাধ্যমে সমাধান করার জন্য সময় দিয়েছিলাম। বিচারে কয়েকজন উপস্থিতও হয়েছিল। নোমান ও সাইদ সহ তাদের বন্ধুরা বিচারে আসার আগেই দুই পক্ষ আবারো ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। পরে তারা দুই পক্ষই থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছে।


এদিকে মারামারির ঘটনায় সাইদুর রহমান সাইদ বাদি হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর হুমায়ুন কবির ও তার দুই ছেলেসহ ৯ জনের নামে একটি মারামারির মামলা (নং ৮) দায়ের করেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত হুমায়ুন কবিরের অভিযোগ, উক্ত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তার পরিবারের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এলাকা থেকে উৎখাত করার পায়তারা করছে অভিযুক্তরা।


এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির জানান, হিজড়া কেন্দ্রীক ঘটনায় দুই পক্ষের মারামাররি হলে প্রথমে অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর হুমায়ুন কবির থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে তারা বিচার-শালিসের মাধ্যমে সমাধান করবে বলে চলে যায়। পরে জানতে পারি তারা উভয়পক্ষ পুণরায় মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে। এ ঘটনায় সাইদুর রহমান সাইদ নামে এক পক্ষ থানায় এসে মামলা দায়ের করেছেন।


আরএক্স/