তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় রেকর্ড পরিমান বোরো চাষাবাদের পরিকল্পনা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, ৬ই মার্চ ২০২৩


তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় রেকর্ড পরিমান বোরো চাষাবাদের পরিকল্পনা
তিস্তা

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। এবার সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে চলতি বছর বোরো চাষে রেকর্ড পরিমান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে ৩ জেলার ১২টি উপজেলার ১৬ লাখ কৃষকের মধ্যে আড়াই লাখ কৃষক সরাসরি এই সেচ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবে। চলতি অর্থবছর তিস্তা ও বুড়িতিস্তা মিলে আবাদযোগ্য এলাকা ১ লাখ ১৮ হাজার ১৪৮ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে।


তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সুত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে সেচ সুবিধার  অন্তর্ভুক্ত ছিল ৭০ হাজার (পানি কম থাকায়) অর্জিত হয়েছে ২৭ হাজার ৪ শত ৮৬ হেক্টর, ২০১৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার (পানি কম থাকায়) অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৫ শত ৭২ হেক্টর, ২০১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার অর্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৪ শত ৩০ হেক্টর,  ২০১৭ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার অর্জিত হয়েছে ২০ হাজার ২ শত ২ হেক্টর,  ২০১৮ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার অর্জিত হয়েছে ৩১ হাজার ১ শত হেক্টর, ২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৫ শত  হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ৪০ হাজার ৫ শত হেক্টর, ২০২০ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫ শত অর্জিত হয়েছে ৪৪ হাজার ৫ শত হেক্টর, ২০২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৫ শত অর্জিত হয়েছে ৫৩ হাজার হেক্টর, ২০২২ সালে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার অর্জিত হয়েছে ৪৯ হাজার ১ শত হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পানি থাকায় ও সেচ ক্যানেল মেরামত করায় চলতি ২০২৩-২৪  অর্থবছরে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি। ২৪২টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সহযোগিতায় নীলফামারী সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর, রংপুর জেলার সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার কমান্ড এলাকায় রোটেশন অনুযায়ী সেচের পানি দেওয়া হবে। 


সেচ প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৯৩-৯৪ সালে সেচ কার্যক্রম শুরু করে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প। উপশাখা ও প্রধান প্রধান খাল মিলে ৮০১.৬৭কিলোমিটার ক্যানেল থেকে এই সেচ সুবিধা দেওয়া হয় সুবিধাভোগী কৃষকদের। এতে কৃষকদের কাছ থেকে বছরে বিঘা প্রতি ১৬০ টাকা এবং একর প্রতি (তিন বিঘা) ৪৮০ টাকা নেওয়া হয়।


তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান  বলেন, সেচ পাম্প বা শ্যালো মেশিন দিয়ে বোরো আবাদে খরচ হয় একর প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা। সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পে মাত্র ৪৮০ টাকায় সেচ সুবিধা পাচ্ছে কৃষকরা। তাই আমরা তিস্তার পানি দিয়েই বোরো আবাদ করি। সমিতির সদস্যরা কম খরচেই পানি পাচ্ছেন।


পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর বিভাগের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেষ চন্দ্র রায় জানান, আমরা পানি ব্যবস্থাপনা দলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যেখানে যতটুকু পানি প্রয়োজন ঠিক সেখানে ততটুকু পানি দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ভালো ফলনের জন্য পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে কৃষককে।


ডালিয়া সম্প্রসারণ উপ দর্শক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে লক্ষ্যমাত্রা নিরুপণে ব্যাঘাত ঘটেছিল। আমরা সেগুলো ইতিমধ্যে কাটিয়ে উঠেছি। পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৪২টি দল ও ৩৮টি সমিতি এবং একটি পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তিস্তা সেচ চ্যানেলের আওতাভূক্ত এলাকায়।


চলতি বোরো মৌসুমে ব্যারেজ এলাকার তিস্তা নদীতে ১৮ থেকে ১৯ শত কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হওয়া এলাকাগুলোতে পানি দেওয়া সম্ভব হবে। নদীতে ফেব্রুয়ারির দিকে পানি কমতে থাকে। তারপরও রোটেশন অনুযায়ী দিলে সমস্যা হয় না। কারণ আবাদটা আমরা জানুয়ারির প্রথম থেকে শুরুর কথা বলেছি কৃষকদের। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে।


ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফা উদ্দৌলা দৈনিক জনবাণীকে বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচদার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেই লক্ষে আমাদের সেচ কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ চলমান আছে। এছাড়াও তিস্তা সেচ প্রকল্পের  পূনর্বাসনের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে।