দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ইট ভাটাগুলো পরিবেশে বিষ ছড়াচ্ছে


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ০৪:০১ পূর্বাহ্ন, ৯ই মার্চ ২০২৩


দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ইট ভাটাগুলো পরিবেশে বিষ ছড়াচ্ছে
ইট ভাটায় পরিবেশে বিষ ছড়াচ্ছে

ঝিনাইদহ-যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বিধিমালা (আইন) অমান্য করে স্থাপিত ইটভাটা গুলো বিধি নিষেধ মানছে না। ঝিনাইদহের ১০০টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র পাওয়া ইটভাটা হচ্ছে মাত্র ১০টি। এছাড়া অধিকাংশ ইট ভাটা গুলো বিধিমালাকে ডোন্টকেয়ার করে পরিবেশ ও বায়ূদুষণ ঘটিয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। জেলার সীমান্তবর্তি মহেশপুর উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ২১টি।


অনুসন্ধানে জানা যায়,পরিবেশ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত/২০১০) ও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর কোন বিধি মানছে না এসব ভাটা গুলো। বেপরোয়া ভাবেই পরিবেশে দূষণ ঘটিয়ে লাখ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছে এসব ইটভাটার ব্যবসা। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইট ভাটার মালিকরা প্রতিবারের মত এবারও ভাটার ইট উৎপাদন কাজ শুরু করেছেন। অধিকাংশ ভাটাতেই হাজার হাজার মন কাঠ জড়ো করা হয়েছে। তাছাড়া হাইওয়ের পাশে ভাটা নির্মাণ করার কোন অনুমতি না থাকলেও এ অঞ্চলের বহুসংখ্যক ভাটা হাইওয়ের পাশে স্থাপন করা হয়েছে। ঝিনাইদহ থেকে হরিনাকুন্ড  থেকে  কালিগঞ্জ-জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে অনেক গুলো ভাটা আইন না মেনেই গড়ে তোলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী কোন হাইওয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ইট পোড়ানো আইনের ৪৬৫ এর উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে আবাসিক এলাকায় উপজেলা সদর, ফলের বাগান বনাঞ্চল লোকালয় ও জনবসতি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। সর্বোচ্চ দেড় একর জমিতে এবং নদী ও খালের কিনারে ইটভাটা স্থাপনের আইন না মেনেই গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ইটের ভাটা। বিধান না মানলে শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই। ইট পোড়ানো শুরু হলে ভাটার কালো ধুয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পরিবেশ, বায়ূ দূষণ,পরিবেশ দুষণ ঘটলেও ভাটা স্থাপন কারিদের সেদিকে কোন পদক্ষেপ নেই।


অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে  ৫০ হাজার থেকে এক/দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানা গ্রহণের পর এসব ইটভাটা আবার একই অবস্থায় আইন অমান্য করেই বছর পার করে। জনসমালোচনা  রয়েছে, প্রতি বছর প্রশাসন যেন ইটভাটা মালিকদের কাছে জরিমানা নিয়ে তাদের বেআইনী কার্যক্রম বৈধতার নবায়ন করে দেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশপুরে এক ইট ভাটার মালিক জানান, মহেশপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলায় ২১টি ইট ভাটা রয়েছে। সরকারী আইন মেনে কয়লা ব্যবহার চলছে মাত্র ৯টি ইট ভাটা। ইট ভাটা গুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি গোল্ড ব্রিক্র, জুয়েল ব্রিক্র, র‌্যডো ব্রিক্র। যাদবপুর ইউনিয়নে রয়েছে ৩টি ইটের ভাটা।


সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলায় ১০০টি ইটভাটার মধ্যে ৯০টিই অবৈধ । ছাড়পত্র প্রাপ্ত বৈধ ইটভাটা১০টি। বৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা ৯টি, বৈধ অটো ব্রিকস ১টি। অবৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা ৩৫টি। অবৈধ ১২০ফুট চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা ৩৬টি। অবৈধ ড্রাম চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা ১৮টি। আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াধীন ১টি অটো ব্রিকস (আজব অটো ব্রিকস) মহেশপুর থানার বৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা ৩টি। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৮টি অবৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা ৪টি। অবৈধ ১২০ ফুট চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা ৪ টি। অবৈধ ড্রাম চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা ৯ টি।


এ বিষয়ে  জানতে চাইলে, ঝিনাইদহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর এর সহকারী পরিচালক শ্রী রুপ মজুমদার জানান, জেলার মহেশপুর উপজেলায় ৩টি বৈধ ও ২১ টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। সময় সল্পতার কারণে সম্প্রতি আমরা এ উপজেলায় ৩টি অবৈধ ভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছি। আগামীতে বাকি ভাটা গুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।