শাক-সবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন ভেদরগঞ্জের আশ্রয়ণে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, ১১ই মার্চ ২০২৩


শাক-সবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন ভেদরগঞ্জের আশ্রয়ণে
শাক-সবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন ভেদরগঞ্জের আশ্রয়ণে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখিালী মুন্সিকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন আদর্শ কৃষিখামার। কৃষিতেই ভাগ্য ফিরেছে এ আশ্রয়ণের  বাসিন্দাদের। বদলে গেছে এক সময়ের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার গুলোর জীবনধারা। ভিটেমাটি পেয়ে প্রশাসনের সহায়তায় শাক-সবজি চাষ করে তাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প ‘আশ্রয়ন-২’ থেকে মাত্র এক বছর আগে ৩০ জন গৃহহীন পরিবারকে একটি করে আধাপাকা ঘর ও দুই শতক জমি দেয়া হয় মুন্সিকান্দি আশ্রয়ণে। এ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে উদ্বাস্তু পরিচয়ে অন্যের জমিতে রায়ত হিসেবে বসবাস করতো। আশ্রয়নে ঘর বরাদ্দ দেয়ার পরে বাসিন্দাদের আত্মপ্রত্যয়ি করে তোলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। শাক-সবজির বীজ, সার, কিটনাশক দিয়ে তাদেরকে কৃষি কাজে উৎসাহিত করা হয়।


অল্প দিনের ব্যবধানে ডিএমখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে একটি আদর্শ কৃষিখামারে রুপান্তরিত করেছে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলো। এক একটি গৃহ যেন একটি খামার। কি নেই সেখানে? হাঁস মুরগি, কবুতর, গবাদি পশু? শাক-সবজি আর ফলফুলে সোনালী হাঁসি যেন আশ্রয়ণে। সিম আর লাউ ছোট্ট টিনের চালা গুলো পূর্ণ হয়ে আছে। আমের মুকুল মন মাতাবে যে কারো। নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, পেঁপে আর কলা গাছের সবুজে ছেঁয়ে আছে পুরো আশ্রয়ণ। 


আশ্রয়ণের বাসিন্দা জাহিদা বেগম বলেন, আমি খুবই অসহায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর দেয়ায় আমি এখন অনেক সুখে আছি। আমি ঘরের চারপাশে সবজি চাষ করি। এই সবজি বিক্রি করেই বাজারের টাকা হয়ে যায়। আমার স্বামী ভ্যান চালায়। প্রধানমন্ত্রীর কারণে আজকে আমি ছেলে সন্তান নিয়ে শান্তিতে আছি। আল্লাহ যেন প্রধনমন্ত্রীকেও শান্তিতে রাখে।


আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা মাকসুদা বেগম বলেন, আমাদের জায়গা ছিল না। ইচ্ছে করলে অন্যেও জায়গাতে একটি বীজ লাগাতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী জায়গা দিয়েছে। এখান ফসল করে নিজেরা খাই, আত্মিয় স্বজনকেই দেই। বিক্রি করে যা পাই তাতে সংসার চলে যায়। এত দিন সিম ছিল। এখনো বেগুন, টমেটো দুন্দোল, রেখা সব সিজনেই সবজি থাকে এভাবেই স্যাররা বীজ দেয়। আমরা আবাদ করি।


আশ্রয়ণের বাসিন্দা রুনা বেগম বলেন, আমাদের কোন জায়গা জমি নাই। প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটা দিছে এটুকুই আমাদের সম্বল। শুধু ঘর হইলেই কি হয়? খাব কী- সেই দুশ্চিন্তা নিয়েই এ আশ্রয়ণে এসিছি। কিন্তু উপজেলার বড় স্যারে এসে আমাদের ঘরের আসপাশে শাক-সবজি বিভিন্ন ফলের চারা লাগানোর পরামর্শ দেয়। লাউ, সিম, টমেটো, বেগুন, বিভিন্ন চারা জৈব সার সবই স্যাররা দিছে। এখন দেখি আল্লাহর রহমতে আমরা খাইয়াও অনেক বিক্রি করছি। এখন আর সংসার চলতে চিন্তা করিনা। 


ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আশ্রয়ণে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেয়া ভূমিহীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ঘর দেয়ার পরেও আর্থ কষ্টে ভোগে অনেকেই। কী ভাবে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ওই ঘরের আসপাশ থেকেই আয় করতে পারে- এমন চিন্তা থেকে সার, বীজ দিয়ে কৃষিতে উৎসাহ দিতে শুরু করলাম তাদের। আমার জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান স্যারও বিষয়টিকে অত্যান্ত পজেটিভ নিলেন। আমাকে সাহস যোগালেন। সারের প্রেরণায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভাগ্যেও চাকা ঘুরতে শুরু করেছে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবার গুলোতে। একটি ঘর মানুষের জীবনকে কিভাবে পাল্টে দিতে পারে- এ আশ্রয়নটি না দেখলে তা বুঝানো যাবেনা। 


তিনি আরও বলেন,আশ্রয়নটিতে সকল বাসিন্দাদের উঠানোর পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত একটি মানবিক কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। এ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর মাধ্যেমে এ পর্যন্ত ৬ শ ৬৮ জন ভূমিহীনকে আমরা পাকা ঘর ও দুই শতক জমি দিয়েছি।