ফেনীতে সরিষা চাষে কৃষকের মুখে হাসি
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, ১২ই মার্চ ২০২৩
চলতি মৌসুমে ফেনীতে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর আবাদ করা জমি থেকে ৪ হাজার ৭১৭ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। এসব সরিষা ভাঙলে জেলায় অন্তত ১ হাজার ৬৫৭ মেট্রিকটন তেল ও ২ হাজার ৫৯৪ মেট্রিকটন খৈল পাওয়া যাবে। টাকার অংকে এ ফসল থেকে কৃষকদের আয় হবে অন্তত ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকার বেশি। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে কৃষকরা জেলাজুড়ে এ ফসল উৎপাদন করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘায় অন্তত ১০ হাজার টাকা হারে কৃষকরা লাভ পাওয়ায় আগামী মৌসুমে জেলায় সরিষা আবাদ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সরিষা ঘরে তুলে লাভ ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। সরকারিভাবে সর্বাধিক প্রণোদনা দেওয়া ও কৃষকদের আগ্রহের কারণে জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। আবাদ করা জমির মাঝে ফেনী সদর উপজেলায় ১ হাজার ৪৬২ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ২১২ হেক্টর, ফুলগাজীতে ৪৪০ হেক্টর, পরশুরামে ১২০ হেক্টর, দাগনভূঞায় ১৪০ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ১ হাজার ১২০ হেক্টর রয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় জেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার ভালো ফলন হয়েছে। এখন চলছে আবাদ করা জমির সরিষা কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমি থেকে অন্তত ৪ হাজার ৭১৭ মেট্রিকটন সরিষা পাওয়া যাবে। এসব সরিষা ভাঙলে ১ হাজার ৬৫৭ মেট্রিকটন তৈল ও ২ হাজার ৫৯৪ মেট্রিকটন খৈল পাওয়া যাবে। টাকার অংকে জেলায় প্রতি কেজি ১শ টাকা হারে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭শ টাকার সরিষা পাওয়া যাবে। যা ভাঙলে ৩শ টাকা কেজির ৪ লাখ ৯৭ হাজার ১শ টাকার তেল ও ৫০ টাকা কেজির ১ লাখ ২৯ হাজার ৭শ টাকার খৈল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, চলতি মৌসুমে ফেনীতে প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে প্রায় ৭ হাজার ২৬৭ টাকা খরচ পড়েছে। এর বিপরীতে প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ১৭৩ কেজি সরিষা। যার বাজার মূল্য কেজি ১শ টাকা হারে প্রায় ১৭ হাজার ৩শ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় কৃষক সরিষা আবাদ করে প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভ পাবেন। তা ভেঙে বিক্রি করলে এ লাভের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
উপজেলার উত্তর কাশিমপুর এলাকার কৃষক শাহজাহান সাজু বলেন, তিনি প্রায় সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এতে তার চাষাবাদ, বীজ, সার ও কীটনাশক, কাটা এবং মাড়াইয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা মাড়াই শেষে তিনি প্রায় সাড়ে ৯শ কেজি সরিষা পেয়েছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রায় ৯৫ হাজার টাকার সরিষা তিনি ঘরে তুলেছেন। বাজারে এ সরিষা বিক্রি করলে তিনি খরচ বাদে ৫৫ হাজার টাকার মতো লাভ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
সোনাগাজী উপজেলার চরছান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষক মিন্টু মিয়া বলেন, এবার ১০ বিঘা জমিতে তিনি সরিষা আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তিনি প্রায় ১ হাজার ৭শ কেজি সরিষা পেয়েছেন। এ সরিষা ভাঙলে প্রায় ৬শ লিটারের বেশি তেল পাবেন। যার বাজার মূল্য ৩শ টাকা হারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। খৈল পাবেন প্রায় ১ হাজর ১শ কেজি। যার বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকার মতো। তার মতে, সরিষা বিক্রি না করে তা ভেঙ্গে বিক্রি করলে অধিক লাভ পাওয়া যায়। তিনি ১০ বিঘায় উৎপাদিত সরিষা ভেঙ্গে তেল ও খৈল বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকা পাবেন বলে মনে করছেন। সরিষা কাটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন ভেজালমুক্ত সরিষার তেল কিনতে ইতোমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্য ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়। জমিতে বপন করা সরিষা কাটা ও মাড়াই শেষে জেলায় অন্তত ৪ হাজার ৭১৭ মেট্টিক টন সরিষা পাওয়া যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন পাওয়া গেছে। ধান বা অন্যান্য ফসলের তুলনায় ফেনীতে সরিষা আবাদ করে কৃষকরা ভালো লাভবান হয়েছেন। আগামীতে জেলায় এ ফসলের আবাদ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন এ কর্মকর্তা।