প্রতিবন্ধী সন্তানসহ গৃহবধূকে ঘরছাড়া করলেন শাশুড়ি-ননদ!
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:১৫ অপরাহ্ন, ২৭শে জুলাই ২০২৫

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের কমলকান্দি গ্রামে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। প্রতিবন্ধী সন্তানসহ ওই নারীকে মারধর করে বসতঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর নাম সালমা বেগম সাথী। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী জহির হোসেনের স্ত্রী। বর্তমানে সাথী তার প্রতিবন্ধী সন্তানসহ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে এমন ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন রাতে সালমা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ তাকে তার স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। কিন্তু পরদিন আবারও তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
মৃত শহিদ উল্যাহ ও রাবেয়া বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে বড় দুই ছেলে মনির হোসেন ও জহির হোসেন প্রবাসে রয়েছেন। তাদের পাঠানো অর্থে পরিবারে টিনশেড পাকা ঘর নির্মিত হয়। প্রথমে সবাই মিলেমিশে থাকলেও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
স্থানীয়রা জানায়, ওই গ্রামের গণিবেপারী বাড়ির মৃত শহিদ উল্যাহ ও রাবেয়া বেগম দম্পতি তিন ছেলেসহ ৪ সন্তানের জনক-জননী। শহিদ উল্যাহ’র মৃত্যুর পর পরিবারের বড় ছেলে মনির হোসেন ও মেজো ছেলে জহির হোসেনের টাকায় টিন শেডের একটি পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করেন। প্রথম দিকে সকলের সাথে সুসম্পর্ক থাকলেও ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে শুরু হয় পারিবারিক বিরোধ।
অভিযোগ রয়েছে, বড় ২ ছেলে প্রবাসে থাকার সুযোগে স্থানীয় একটি মহলের প্ররোচনায় প্রবাসী ছেলে জহির হোসেনের স্ত্রী সালমা বেগম সাথীর সাথে শাশুড়ি রাবেয়া বেগম ও ননদ নাছিমা বেগমের সাথে ঝামেলা বাঁধে। এনিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হামলা ভাংচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূর ঘর ভাঙচুর করে তাকে প্রতিবন্ধী সন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দেয় তার শাশুড়ি, ননদ ও ভাসুরের লোকজন। দীর্ঘদিন বাপের বাড়িতে থাকার পর গত ২৫ জুলাই বিকালে সালমা বেগম সাথী তার প্রতিবন্ধী সন্তানসহ স্বামীর বাড়িতে আসলে শাশুড়িসহ লোকজন তাকে পুনরায় ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে শুক্রবার রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করে সালমা বেগম সাথী।
থানা পুলিশ সালমা বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাতেই তাকে স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। কিন্তু পরদিন শনিবার সকালে শাশুড়ি ও ননদ মিলে সালমা বেগমকে মারধর করে ঘর থেকে আবারও বের করে দেয়। বর্তমানে সে সন্তানসহ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
ভুক্তভোগী মালয়েশিয়া প্রবাসী জহির হোসেনের স্ত্রী গৃহবধূ বলেন, আমার স্বামী ও ভাসুর মিলে ঘরটি নির্মাণ করেছে। কিন্তু এখন আমার ভাসুরের প্ররোচনায় শাশুড়ি ও ননদ মিলে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রবাসে থেকে জহির হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর যে নির্মমভাবে অন্যায় হচ্ছে। আমি এর বিচার চাই। প্রয়োজনে আমাদের ঘরটি সমানভাবে ভাগ করে আপাতত আমার পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার অনুরোধ করছি প্রশাসনসহ বিচার বিভাগের কাছে।
এদিকে শাশুড়ি রাবেয়া বেগম বলেন, বউয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। সে আমার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করছে। একসঙ্গে থাকলে ঝামেলা হবে, তাই অন্য জায়গায় গিয়ে থাকুক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন রতন বলেন, আমি চেষ্টা করেছি তাদের বিরোধ মিটিয়ে দিতে, একপক্ষ মানলে অপর পক্ষ মানছে না। তাই সমাধান হচ্ছেনা।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে রাতে ওই নারীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। পুনরায় ঘটনা ঘটলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসডি/