শালিখায় বিলুপ্তির পথে রুপকন্যা খ্যাত শিমুল গাছ
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, ২১শে মার্চ ২০২৩
শিমুল ফুল তুমুল লাল, ছড়ায় রঙ্গিন আলো, মনকাড়া কৃষ্ণচূড়া, দেখতে অনেক ভালো। কবিতাটিতে সূর্য/ রুপকন্যা খ্যাত শিমুল গাছ নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করা হয়েছে বলা হয়েছে শিমুল গাছ নিয়ে নানা কথা।
ঋতুরাজ বসন্ত এলেই প্রকৃতি প্রেমীদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে শিমুল ফুল যার প্রেমে বিমুগ্ধ হয়ে নানা কবিতা লিখে প্রাণের আস্বাদন মিটাতো কবিতা প্রেমিরা। কবির কল্পনা জগতকেও আলোড়িত করতো শিমুল গাছের সৌন্দর্য । গাছটি অনেক উঁচু হওয়ায় অনেক দূর থেকে গাছটির মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। শিমুল গাছের নানা গুণ থাকার কারণে গাছটিকে বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বোম্ববাক্স সাইবার লিন এটা বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আগুন ধরা ফাগুনে চোখ বাঁধাননো গাড়ো লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়।
বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। গাছটি ৮০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে গাছটি বেঁচে থাকে অনেক দিন। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে, বসন্তের শুরুতেই গাছে লাল লাল ফুল ফুটে থাকে দেখে যেন মনে হয় নববধূ রঙ্গিন পুষ্পে আচ্ছাদিত করে রেখেছে নিজেকে।
আর ফুল থেকেই হয় ফল, চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয় বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ফল পেকে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। বীজ থেকেই এ গাছের জন্ম, প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে ওঠে, অন্য গাছের মতো শখ করে এই গাছগুলো কেউ রোপন করে না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছটি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না।
স্থানীয়ভাবে গাছটি মান্দার গাছ বলে পরিচিত যার অর্থ বড় গাছ। আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ধলা কাজী ও মাজু বিবীসহ স্থানীয় কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেপ, তোষক, বালিশ তৈরিতে শিমুল গাছের জুড়ি নেই শিমুল গাছের তুলা অনেক ভালো পাশাপাশি এই গাছের ছাল, পাতা, ফুল শিকড়ের নানা গুণের কথাও জানান তারা। আড়পাড়া বাজারের তুলা ব্যবসায়ী হাসমত আলী জানান, শিমুল গাছের তুলা সর্বোৎকৃষ্ট তুলা।
আগে গাছের সংখ্যা অনেক ছিল তাই শিমুল গাছের তুলা কম দামে পাওয়া যায় যেত তবে বর্তমানে শিমুল গাছের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় এ গাছের তুলার দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য গাছের ন্যায় প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের প্রতিটা মোড়ে মোড়ে একটি করে শিমুল গাছ রোপন করা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
তাতে করে নতুন প্রজন্ম শিমুল গাছ ও তার নানাবিধ গুনের কথা জানতে পারবেন বলেও মনে করছেন তারা। বিগত এক যুগ আগেও শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আনাচে কানাচে মোড়ো মোড়ে শিমুল গাছ দেখা যেত খুব। তবে এখন আর তা আগের মতো চোখে পড়ে না । প্রস্ফুটিত শিমুল ফুল এখন আর আগের মতো বসন্তের শুভাগমনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না ।
শিক্ষক ও গবেষক শ্রী ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, বসন্ত এলেই প্রকৃতিতে শিমুলের লাল লাল ফলে বৃক্ষরাজ এক নতুন সাজে সজ্জিত হতো কিন্তু এখন আর তেমনটি চোখে পড়ে না তবে বিলুপ্তপ্রায় এ গাছগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিরীক্ষার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
শালিখা উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, শিমুল, দেবদারু, সোনালী, বটগাছ সহ যে সকল গাছ বিলুপ্তির পথে খুব অল্প দিনের মধ্যে আমরা ঢাকা থেকে ঐসব গাছ সংগ্রহ পূর্বক শালিখা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে রোপন করবো পাশাপাশি উপজেলার বুনাগাতী ইউনিয়ন কে বৃক্ষে আচ্ছাদিত একটি মডেল ইউনিয়নে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
আরএক্স/