দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন ইবি শিক্ষার্থীরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৩


দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন ইবি শিক্ষার্থীরা
ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন ইবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: জনবাণী

মাহে রমজান ও ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ফাঁকা হয়ে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ কক্ষগুলো খালি। 


বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড়, ডায়না চত্বর, বটতলা, মফিজ লেক ও আড্ডা চত্বর গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যা খুবই কম।


দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা ও ঈদের আনন্দে মেতে উঠে মুসলিম জাতি। আর এই আনন্দকে ভাগাভাগি করতে দূর দুরন্ত থেকে মানুষ ছুটে যায় পরিবারের কাছে।


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন সন্তান তার মা-বাবার সাথে রোজা ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত থাকে তখন মনে হয় পৃথিবীর সকল সুখগুলো যেন এখানে এসে ভর করে। আর এই সুখের আশায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।


হলগুলোতে দেখা যায়, কেউ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে রাখতে ব্যস্ত। কেউবা নিত্যকার সঙ্গী বই গোছাতে ব্যস্ত। আবার অনেকেরই দেখা যায় বাসের অপেক্ষায় রাস্তার এক পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে। বাস কাউন্টার গুলোতে মহা ব্যস্ততা। সবাই যেন একই মায়ার চাদরে আবৃত।


বাসায় যাওয়ার পথে বাসের জন্য অপেক্ষারত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিম হোসেনের কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম রমজান ও ইফতার পরিবারের সাথে কাটানোর অনুভূতি অন্যরকম। মা-বাবার সাথে রোজা ও ঈদ উদযাপনে দারুণ ভালো লাগা কাজ করে। এবার বাড়ি থেকে পরিবারের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে চাই।


প্রায় চার মাস পর বাড়ি যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন। তার কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় চার মাস পর বাড়ি যাচ্ছি। মনে হচ্ছে চার মাস নয়, এক বছর পর যাচ্ছি। টানা ক্লাস, পরীক্ষায় হাঁপিয়ে গেছি। এবার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। আশা করি ভালো সময় কাটবে।


এদিকে ফাঁকা ক্যাম্পাসে চারদিকে শুধুই শূন্যতা। এই শূন্যতার মধ্যে মিট মিট করে গান গেয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের পাখিরা, সঙ্গে বইছে হালকা মৃদু বাতাস। এই মৃদু বাতাসে শিক্ষার্থীরা গা (শরীর) না ভাসালেও, ক্যাম্পাসের ফুলেরা হেলে দুলে উল্লাস করছে বেশ।


শিক্ষার্থীদের শূন্যতায় ক্যাম্পাস যেন নিস্তেজ হয়ে আছে। প্রাণ নেই চারদিকে, আছে শুধুই শূন্যতা। শূন্যতায় চারদিকে ভরে উঠেছে, তৈরি করেছে এক বিশাল বৈরিতা। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মরুভূমির এক খণ্ড মাস্তুল আর ধোঁয়াশা।


ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বর, বটতলা, মফিজ, লাইব্রেরি, জিয়া মোড়, এসব জায়গায় দেখা মিলত প্রাণখোলা হাসিতে আড্ডায় মুখরিত শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থী শূন্যে খাঁ খাঁ করছে শিক্ষার্থীদের প্রিয় আড্ডার এইসব জায়গাগুলো। যে লাল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীরা বাসে করে ক্যাম্পাসে আসার জন্য দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। সেই লাল বাসে সিট ধরার জন্য নেই তাড়াহুড়ো। শুধুই নিস্তব্ধতা। কিংবা চায়ের দোকানগুলোতে নেই আড্ডাবাজদের উপস্থিতি। তারুণ্যের অনুপস্থিতিতে স্পন্দনহীন হয়ে পড়ে আছে সহস্র প্রাণের কলরবে মুখরিত ক্যাম্পাস।


তবে এই জনশূন্য ক্যাম্পাসে কেউ কেউ না থাকলেও দেখা মিলছে কতিপয় কিছু শিক্ষার্থীদের। যারা ক্যাম্পাসকে ভালোবেসে বা পরীক্ষা অথবা টিউশনির কারণে ছুটির পর ও থেকে গেছেন ১৭৫ একরের সবুজ চত্বরে। বন্ধুদের সঙ্গে দিচ্ছেন আড্ডা, করছেন উল্লাস, তুলছেন সেলফি। 


এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান বলেন, আজ থেকেই আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যাস আর বন্ধুত্বের টানে বন্ধ ক্যাম্পাসেও আরো কিছুদিন থেকে গেলাম। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে দারুণ সময় কাটছে।