লামায় বাঁশের কঞ্চি ও লাউলের খোলে ম্রো বাঁশি ‘প্লুং’
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:৫৯ অপরাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৩
ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত সবাই এক প্রকার বিশেষ বাঁশির সুর ও ছন্দের তালে দল বেঁধে নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। বিশেষ কোন উৎসব হলে তো কথাই নেই। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ক্লান্তিহীন ভাবে একটানা নাচ-গান আসর।
ক্রাইসি ও লাচিং নামের দুজন ম্রো তরুনী জানান,নাচে গানে খুবই পটু তারা। পরিবারের বয়স্ক নারীদের কাছ থেকে বংশ পরম্পরায় এসব নাচ-গান চলে আসছে। জুম চাষ ও ঘরের কাজের পাশাপাশি নাচ-গানের মাধ্যমে নিজস্ব ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে চাইছে তারা।
পশু বলির মতো বিশেষ কোন অনুষ্ঠান হলে রাতভর চলা এই নৃত্যকে তাল দিয়ে থাকে যে বাঁশির সুর, ম্রো জনগোষ্ঠীর ভাষায় সে বাঁশির নাম হল 'প্লুং'। একটি লাউয়ের খোল আর কয়েকটি বাঁশের কঞ্চি মিলে তৈরি হয়ে থাকে ম্রোদের এই 'প্লুং' বাঁশি। একটি লাউয়ের খোলকে দু'পাশে ছিদ্র করে কোনোটায় চারটি আর কোনোটায় ছয়টি বাঁশির কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে এ 'প্লুং' বাঁশির সুরের তালে ও ছন্দে রাতভর আনন্দে মাতে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মেলং ম্রো জানান,প্লুং নিয়ে ম্রো সম্প্রদায়ের মধ্যে দুটি প্রচলিত কাহিনি রয়েছে। এক সময় মহামারি হিসাবে পরিচিত পাওয়া কলেরা রোগ থেকে গ্রামবাসী মুক্তি পাওয়া নিয়ে এ দুইটি কাহিনি।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই ম্রো বাঁশি তৈরি করে আসছেন লামা রুপসী পাড়া ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ার কুংরো কারবারি (গ্রাম প্রধান) ৬৫ বছর বয়সী তার মতে, নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা কেউ এই বাঁশি প্লুং তৈরি করতে জানে না। তবে দুর্গম এলাকার ম্রো বাসিন্দাদের অনেকে এখনও ম্রো বাঁশি তৈরি করে থাকে। কিন্তু হাতের দক্ষতা না থাকলে ভালভাবে এই বাঁশির সুর ফুটে উঠবে না।
ম্রো সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এক ধরনের লাউয়ের খোলের ভেতর বাঁশের নল পুরে তৈরি হয় ‘প্লুং’ নামের বাঁশি। এটি সম্ভবত একমাত্র দেশীয় বাদ্যযন্ত্র,যাতে একই সঙ্গে একাধিক সুর তোলা সম্ভব। প্লুং বাঁশিটি যত বড় হবে,এর সুর হবে তত চড়া। নাচ-গানের সঙ্গে আরো যেসব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় ম্রো ভাষায় এগুলো হচ্ছে তম্মা (ঢোল), ক্লিন চা (খঞ্জনি) লাং মেং সা (বড় খঞ্জনি)। এছাড়া মেয়েদের নাচের পোশাককে ‘লংকি’ এবং বাদ্যযন্ত্রী পোশাককে ‘লংকি বেন’ বলে। পাগড়িকে ম্রো ভাষায় বলে ‘ন পং’।
আরএক্স/