সেতুর বাধে মৃত প্রায় তুরাগ নদ,পানি প্রবাহ বন্ধ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৩
পরিত্যেক্ত ঘোষনার পর। তুরাগ নদের উপর নির্মিত প্রায় শত বছর আগের সেতুটি এরি মধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রায় কয়েক মাস আগে শুরু হয় সেতু অপসরনের কাজ। পুরনো সেতুটি ভেঙ্গে নদের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়কের পিলার।
সেতুর পিলার ও নিচের অংশে ভারি যন্ত্রপাতি স্থাপনের অজুহাতে মাটি দিয়ে নদের কয়েকশ ফুট জায়গা জুড়ে দেয়া হয়েছে বাধ। এতে নদের প্রসস্থ কমে গিয়ে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদের পানিতে ছোট বড় সকল নৌযান চলাচল এখন বন্ধ রয়েছে।
গাজীপুরকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জুড়ে দেবার একমাত্র সেতু ও তার নিচের অংশের চিত্র এটি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তুরাগ নদ ভরাট করে সেতু অপসরন ও পিলার নির্মাণের কাজ করেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ করে নদে মাটি ফেলে বাধ দেওয়ায় পানি প্রবাহের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ এর যথাযথ অনুমতি না নিয়ে নদ ভরাট ও পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করাটা বেআইনি।
সোমবার (২৭ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে নদের পানি কমে গেছে। অধিকাংশ স্থানে নদের পাড় দখল ও দূষণে ভুগছে তুরাগ। সেতুর নিচের অংশে দুই পাশে মাটি ফেলে বাধ দেয়া হয়েছে। নদের পানিতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়কের কয়েকটি পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। এতে নদের ওই অংশ সরু খালে পরিনত হয়েছে।
তুরাগ নদের নৌকা চালান এমদাদ। তিনি বলেন,তুরাগ নদের এই অংশে প্রায় ৭০টি ছোট নৌকা আছে। নদের পাশেই টঙ্গী বাজার ।আমরা শুধু এখন মানুষ পারাপার করি। মাটি দিয়ে বাধ দেওয়ায় এখন ট্রলার চলাচল করতে পারে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, নদের উভয় পাশে মাটি দিয়ে বাধ দেয়া হয়েছে। নদটি সরু হয়ে গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। সেতুটি ভেঙ্গে ফেলার পর মাটি সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার সাদাত বলেন, বাধ দিয়ে সেতু নির্মান নয়,যেনো তুরাগ নদকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এরই প্রতিবাদে আমরা আগামী পাঁচ এপ্রিল প্রতিবাদ সভা ডেকেছি।
টঙ্গী নৌ পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ (পরিদর্শক) হযরত আলী মিলন বলেন, তরাগ নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করেই সেতুটি ভাঙ্গা ও উড়াল সেতুর পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে নৌকা চলাচলের জন্য কয়েক ফিট খুলে দেয়া হয়েছে। এটি সরকারের মেগা প্রজেক্ট।আমাদের তেমন কিছুই করার নেই।
টঙ্গী নদী বন্ধরের সহকারী বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া জনবাণীকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করে সেতুটি অপসর ও উড়াল সেতুর পলার নির্মাণ করে করে আসছিলো। এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। নদের মাঝের অংশে কিছুটা মাটি ভেকু দিয়ে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মোল্লা জনবাণীকে বলেন, সেতু অপসরন ও উলাড়সেতুর পিলার নির্মণ কাজের দায়িত্ব আমাদের নয়। এটি বিআরটি প্রকল্পের অধিনে।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে দৈনিক জনবাণীকে বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোতি নিয়েই নদের উপর উড়াল সেতু নির্মানের কাজ চলছে। নদের মাঝে পিলার স্থাপন করতে গিয়ে কিছু অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কাজ শেষে মাটি অপসরন করা হবে।
আরএক্স/