বাঙালির সংস্কৃতি হালচাষে ঘোড়ার ব্যবহারে স্বাবলম্বী মুরাদনগরের কৃষক হেলাল


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০১ পূর্বাহ্ন, ১লা এপ্রিল ২০২৩


বাঙালির সংস্কৃতি হালচাষে ঘোড়ার ব্যবহারে স্বাবলম্বী মুরাদনগরের কৃষক হেলাল
মুরাদনগরের পাঁকদেওড়া গ্রামে গরুর পরিবর্তে ঘোড়ার সাহায্যে আবাদি জমিতে হালচাষ । ছবি: জনবাণী

লাঙল হচ্ছে সর্বভারতীয় অঞ্চলের প্রাচীন কৃষি উপকরণ। ফলসি জমির মাটিতে অবস্থিত পুষ্টি গুণাগুণ সমূহ মাটির নিন্মভাগ হতে উপরে উঠানোর জন্য মাটির শক্ত দলাগুলোকে ভেঙে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করতেই হালচাষের প্রচলন। জমিতে অবশিষ্ট উদ্ভিদ বা, পোকামাকড়ের দেহবিশেষ মাটির উলট-পালটের কারণে তলানিতে চাপা পরে জমিতে বৃদ্ধিপায় উর্বরতা। মাটির উপরিভাগ নরম কণায় পরিণত হওয়ায় জমিতে বৃদ্ধিপায় বায়ুর চলাচল, ফসলের বীজ বপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় কৃষকের জন্য। লাঙল দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথমটি মাটিকে স্থানচ্যুত করতে ব্যবহৃত হয় তার নাম হাল অথবা, লাঙল। অপরটিকে গরু ও মহিষের ঘাড়ে লাগানো হয় তার নাম জোয়াল।


প্রাচীনকাল থেকেই দুইটি গরু বা, মহিষের সাথে একজন মানুষের সমন্বয়ে হালচাষ করা হতো। কালের পরিক্রমায় আধুনিক সকল যন্ত্রপাতির আগমনে আশির দশক থেকে বিলুপ্তির পথে লাঙল। গ্রামগঞ্জের অসংখ্য স্থানে ট্রাক্টর পাঠানো সহজলব্ধির অভাবে গরুর প্রচলন রয়ে গেছে এখনো। তবে ঘোড়ার সাহায্যে হালচাষ করার বিষয়টি সচরাচর চোখে পরেনা।


কুমিল্লার মুরাদনগরের পাঁকদেওড়া গ্রামের ফলসি জমিতে দেখা মিলেছে ঘোড়া দিয়ে হালচাষের। কৃষক জয়দল মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন(৩৯) গরুর পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে নিজের জমি সহ আশেপাশের অন্যের জমিতেও হাল চাষ করে উপার্জন করছেন জীবিকার টাকা। গরুর চেয়ে ঘোড়ার দৌঁড়ানোর ক্ষমতা অত্যাধিক, ফলে অল্প সময়েই অধিক জমিতে হালচাষ করা সম্ভব। গরুর চেয়ে ঘোড়ার ক্রয়মূল্য কম হওয়ায় পদ্ধতিটি সাধারণের সহজলভ্য। হালচাষ ছাড়াও ঘোড়া দিয়ে গাড়ী তৈরী করে যাতায়াতের বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিয়েতে বর-বউ নেওয়ার ক্ষেত্রে শখের বসে ব্যবহার করে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ী।


কৃষক হেলাল উদ্দিন জনবাণীকে বলেন, একটি গরু কিনতে যত টাকা লাগে সেই টাকা দিয়ে আমি চারটি ঘোড়া কিনেছি। ঘোড়াগুলোকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করি। ঘোড়াগুলো দিয়ে নিজের জমিতে চাষ করে, পাড়াপড়শিরা অনুরোধ করলে আটশো থেকে হাজার টাকায় প্রতিবিঘা জমি চাষ করে দেই। আমার জীবিকার নতুন মাধ্যম হয়েছে হালচাষ। প্রতিদিন ভালোই উপার্জন হয় বিভিন্ন জমিতে হালচাষ করে, যেগুলো আগে পারতাম না। ঘোড়ার গাড়ী দিয়ে গতমাসে একটি বিয়েতে নববধূকে পৌঁছে দিয়েছি, সেখান থেকে ভালোই টাকা দিয়েছে।


দূর্গা রাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষা বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জনবাণীকে বলেন, ঘোড়ার সাহায্যে হালচাষ করা হতো কিন্তু এটির তেমন প্রচলন ছিলোনা। গরু ও মহিষের প্রচলনই বেশি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। গরীব যেসকল কৃষকরা অর্থের অভাবে গরু কিনতে পারেনা, সেখানে কমদামে ঘোড়া কিনে হালচাষ করাকে সাধুবাদ জ্ঞাপন করি। বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী লাঙল ধরে রাখার পাশাপাশি ঘোড়ায় হালচাষের পদ্ধতি ব্যবহার সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবিদার।