অপ্রচলিত পণ্য হাঁসের পালকে চমক দেখালেন নওগাঁর আবু বক্কর


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, ৩রা এপ্রিল ২০২৩


অপ্রচলিত পণ্য হাঁসের পালকে চমক দেখালেন নওগাঁর আবু বক্কর
দেওয়ান আবু বক্কর

গত শতকেও হাঁসের পালক কালিতে চুবিয়ে লেখার কাজ হতো। পালকের তখন বেশ কদর ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে। ‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম’ বলে কবি নজরুলও বেঁধেছিলেন গান। হাঁস বা হংস যে নামেই ডাকা হোক তা এসেছে জীবনানন্দ দাশসহ আরও কবির কবিতায়।


প্রাণিসম্পদ হলো অমিত সম্ভাবনার খোলা দিগন্ত। অত্যাবশকীয় পুষ্টির যোগান ছাড়াও এখানে রয়েছে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ। আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে এই সেক্টরের রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা।


হাঁস জবাইয়ের পর এর পালক আমরা আবর্জনার স্তুপে ফেলে থাকি। কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় বস্তই যে আমাদের কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সহজ মাধ্যম হতে পারে তা দেখিয়েছেন নওগাঁর দেওয়ান আবু বকর।


একজন উদ্যোক্তা হলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের দেওয়ান আবু বকর। তিনি হাঁসের পালক সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে তাইওয়ান এবং চীনে রফতানি করেন। রাজশাহী, নওগাঁ, হিলি ও চুয়াডাঙ্গা থেকে তিনি এই পালক সংগ্রহ করেন।


প্রতি মাসে তিনি ৫-১০ মে.টন রফতানি করেন এবং ভবিষ্যতে এর পরিমান আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে প্রথম থেকেই তিনি তাইওয়ানে পণ্য রফতানি করেন এখন পর্যন্ত তিনি ৬৩ শিপ মেন্টরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার কেজি পালক রফতানি করেছেন যার ফলে ৯ লাখ ৫৯ হাজার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছেন দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা।


বর্তমানে অপ্রচলিত হাঁসের পালক যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ভারত, চীনসহ ইউরোপের সকল দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। মাঠ পর্যায়ের ভোক্তাদের কাছ থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স তিতাস নির্মা পাতি হাঁস, চিনা হাঁস ও রাজ হাঁসের পালক সংগ্রহ করে থাকে। তারপর  প্রসেসিং এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন করার পর প্রতি মাসে প্রায় দশ টন করে পালক তাইওয়ানে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। যা জাতীয় উন্নয়নে চুপিসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাণিসম্পদ হলো অমিত সম্ভাবনার খোলা দিগন্ত। অত্যাবশকীয় পুষ্টির যোগান ছাড়াও এখানে রয়েছে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ। আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে এই সেক্টরের রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা।


তিতাস নির্মা'র সত্ত্বাধিকারী দেওয়ান আবু বক্কর জনবাণীকে বলেন, "১০ থেকে ১৫ জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হকারদের মাধ্যমে হাঁসের পালক সংগ্রহ করি। অপ্রচলিত পণ্য নিয়ে কাজ করছি এটা আনন্দের।  ২০১২ সালে ৩২ টাকা কেজি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি ধরে হাঁসের পালক সংগ্রহ করছি।" 


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপ্রচলিত পণ্য তালিকায় হাঁসের পালক না থাকায় পৃষ্ঠপোষকতাও মেলে না। অথচ পরিকল্পিতভাবে এ খাতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে সারাদেশ থেকে পালক সংগ্রহ করে তা রফতানি করা যেত। আয় হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বলে মনে এই উদ্যোক্তা। 


নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহির উদ্দিন জনবাণীকে বলেন, "সময়ের প্রয়োজনে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও কর্মসংস্থানের আরও অনেক নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। অনেকেই এই সেক্টরের খুবই সামান্য কিছু অবলম্বন করে কর্মসংস্থানের সাথে সাথে দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে।"


দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদ থেকে সংগ্রহ করা হাঁসের পরিত্যক্ত পালক, যা লম্বা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মতো ইউরোপের পাঁচটি দেশে নিয়মিত রফতানি করে আসছেন দেওয়ান আবু বক্কর। কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও রফতানি থেমে নেই। পালকের উচ্ছিষ্ট অংশ জৈব সার হিসেবে ফসলে ব্যবহার করা হয়। 


বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় যেমন হবে, তেমনি কর্মসংস্থানও হবে বহুজনের। সরকার এ খাতে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়।