রায়পুরে প্রকাশ‍্য বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫০ পূর্বাহ্ন, ৫ই এপ্রিল ২০২৩


রায়পুরে প্রকাশ‍্য বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশ
ছবি: দৈনিক জনবাণী

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ২নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাশের হাট বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে  প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর বারোটা পযর্ন্ত প্রকাশ‍্য বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ইলিশ। নেই কোন বাজার মনিটরিং ক্ষোভ প্রকৃত জেলেসহ স্থানীয় জেলে প্রতিনিধির। 


এ বিষয়ে প্রান্তিক জেলে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং রায়পুর উপজেলা জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা প্রান্তিক জেলে জনগোষ্ঠী নদী ও সাগরে মাছ ধরি । নদী ও সাগরে মাছ ধরে পরিবার পরিজনদের কে নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের আহরণকৃত মাছ দেশে আমিষের অভাব পূরণ করে এবং বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ২০২৩ সালের পহেলা মার্চ থেকে নদীতে ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। আমাদের প্রকৃত জেলেরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা পালন করে  এই নিষিদ্ধ সময় সম্পূর্ণরূপে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থেকে মানবেতর জীবন যাপন করে দিন কাটাচ্ছেন। কোন কোন জেলে আবার দিন মজুরির কাজ করে সংকটে সংসার চালাচ্ছে। তবুও তারা নিষিদ্ধ সময় সরকারি আইন অমান্য করে সমুদ্রে মাছ ধরছে না।  অপরদিকে এক শ্রেণী প্রভাবশালী কুচক্রী মহল অ-জেলে এবং সুবিধাবাদী অসাধু ব‍্যবসায়ী সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিনিয়তই নদী ও সাগরে ইলিশ ধরছে এবং সেগুলো আমাদের এই খাশের হাট বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিনই বিক্রি করতে দেখছি। কে বা কারা মাছ ধরছে? কীভাবে বিক্রি করছে, তাদের খুটির জোর কোথায়? কার সহযোগিতায় তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাজারে প্রকাশ‍্য ইলিশ বিক্রি করছে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন বাজার মনিটরিং নেই। 


তিনি আরও বলেন, অপরদিকে আমাদের প্রকৃত জেলেদের মধ্যে কিছু জেলে সরকারি সাহায্য সুবিধা পায়নি তারপরও তারা নদীতে জাটকা ধরতে যায়নি। প্রকৃত জেলেদের তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় হতে জাতীয় পর্যায় তিনজন জেলে প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও আমাদের কোথাও ডাকা হচ্ছে না। যার ফলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত জেলেদের পক্ষে আর কোন কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। ফলে সরকারি সাহায্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে কিছু সংখ্যক প্রকৃত অসহায় জেলেরা।  কার, কীভাবে নাম দেওয়া হচ্ছে সেটাও জানতে পারছি না। আমাদেরকে কোন মূল্যায়নই করা হচ্ছে না। জেলেদের তালিকা প্রণয়ন কোন কমিটিতে আমাদেরকে ডাকা হচ্ছে না।  আমি প্রশাসন ও উপজেলা, জেলা মৎস্য অফিসারসহ কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি এই পুরো অভিযান সময়টাতে যেন কোন কুচক্রী মহল সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ মাছ ধরতে এবং সে মাছ কোন বাজারে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য  আইনগত  পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। সেই সঙ্গে আরও অনুরোধ করছি জেলেদের জন্য সরকারি সহযোগিতা কারা পাচ্ছে, কীভাবে পাচ্ছে? সেগুলো জেলেদের প্রতিনিধিদের কে নিয়ে যাচাইবাছাই করে দেখতে। যাতে কোন অসহায় প্রকৃত জেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত না হয়।


এ বিষয়ে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পনেরো থেকে বিশ জনেরও বেশিজেলে বলেন, আমরা কেউ কেউ প্রায় ৩০ বছর ধরে মাছ ধরা পেশায় যুক্ত আছি। আমরা কখনওই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ সময়ে সাগরে বা নদীতে মাছ ধরতে যাইনি। কে? বা কারা এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ মাছ ধরছে তা জানিনা। তবে প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি আমাদের বাজারে সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত প্রকাশ‍্য নিষিদ্ধ জাটকা, ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, আমরা প্রশাসনের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করছি যাতে সরকারি আদেশ অমান্য করে কেউ নিষিদ্ধ ইলিশ ধরতে এবং তা বাজারে বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে আইনগত ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে। 


এবিষয়ে রায়পুর উপজেলা মৎস‍্য কর্মকর্তা মো.. এমদাদুল হক বলেন," আমরা কোস্টগার্ড এবং মোবাইল কোর্টসহ  প্রতিদিন দু'বেলা করে বাজার মনিটরিং করছি। আমাদের জাটকা নিধন অভিযান কার্যক্রম চলমান থাকবে।"


এ বিষয়ে রায়পুর কোস্টগার্ড তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে আমরা পুরান বেড়ী, খাশের হাট বাজার, মেঘনা বাজার, কাঁটাখালী থেকে বেশ কয়েক টন জাটকা আটক করছি। আমরা বসে নেই, এখনো নদীতে অভিযানে আছি, আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।"