পঞ্চগড়ে হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় চা চাষীরা হতাশ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২১ পিএম, ২৪শে আগস্ট ২০২৫

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্তরবঙ্গের চা শিল্প গড়ে উঠেছে পঞ্চগড় জেলায়। পাহাড়ী অঞ্চলের এই চা চাষের অসম্ভবকে সম্ভবনায় নিয়ে গেছে জেলার চাষীরা।
উৎপাদিত চা’র সাথে জড়িত হাজারো শ্রমিক। প্রায় তিন দশক হতে চলেছে এ এলাকার কাঁচা চা পাতা উৎপাদন। তবে কাঁচা চা পাতার দাম নিয়ে চলছে নানা ছলচাতুরী।
এছাড়া নানা প্রতিকূলতা আর সিন্ডিকেটের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছিল চাষীরা। প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় মিটিং আর সভায় তা সীমাবদ্ধ ছিল। নানা প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতায় তার কোন সফলতা আসেনি।সড়কে চায়ের কাঁচা পাতা ফেলে প্রতিবাদে নেমে ছিল পঞ্চগড়ের চা চাষীরা। ক্ষূদ্র-মাঝারি সহ সকলেই এ আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন।
তবে কোন মিটিং কিম্বা সভা আন্দোলন কোন কাজেই আসেনি। নানা প্রতিকূলতার শিকার হয়ে সমতলের চা চাষীদের অনেকেই চা গাছ তুলে ফেলে অন্য ফসল আবাদ শুরু করেন।
তবে এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন চা চাষীরা। তবে বাগানে চা গাছে পচা রোগ সাথে পোকার আক্রমন কিছুটা বিড়ম্বনায় ফেলেছে চা চাষীদের ।এর মধ্যে চা চাষীদের অভিযোগ চাহিদা মত মিলছেনা প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। জানা যায় উত্তরবঙ্গের এক মাত্র চা চাষের সমতল ভূমি পঞ্চগড়। এখানে ১৯৯৪ সালে শুরু হয় চা চাষ। তবে চা চাষীরা সিন্ডিকেট, ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা সঙ্কট আর প্রতিকূল পরিবেশের কারনে তারা সমস্যার মুখে পড়েছিল। তবে তা এবারে কাঁচা চা পাতার দাম বাড়ায় নতুন স্বপ্ন দেখেন চাষীরা।
জানা যায় গত মৌসুমে বা তার আগেও প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতা বিক্রি হয়েচিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। তবে এবারের মৌসুমে তা ২৮ টাকা থেকে ৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এতে চিন্তার ভাজ কপাল থেকে সরে গেলেও অবার দামে টানোপোড়েন শুরু হয়েছে। শনিবার ২৩ আগষ্ট কাচাঁ চা পাতা ২২ টাকা থেকে ২৪ টকায় নেমে আসে।
এদিকে হঠাৎ চা বাগানগুলোতে পচা রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমন এবং হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় চিন্তিত চা চাষীরা। চা চাষীদের অনেকেই বলেন দামে কিছুটা স্বস্তি ফেরালেও হঠাৎ কমে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
এমনিতেই ঠিকমত সার কীটনাশক না পাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। এর ফলে লাভ হলেও বেড়েছে ব্যয়। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ভূমিকার দাবী জানান।
চা চাষী সজীব বলেন, তিনি ৩০ বিঘা চা চাষ করেছেন। প্রতিকেজি কাচাঁ চা পাতা বৃহষ্পতিবার ৩১ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ শনিবার শুনলাম কারখানার মালিকরা সরকারী নির্ধারিত ২২ টাকা কেজি দরে কাচাঁ চা পাতা কিনবেন। তিনি এও বলেন এবারে নতুন করে চা বাগানে পচা রোগ দেখা দিয়েছে এবং চাহিদা মোতাবেক সার-কীটনাশক পাচ্ছেন না। সজীব বলেন কারখানার মালিকরা বলছে তাদের নাকি লোকসান হচ্ছে।
রবিউল ইসলাম রবি বলেন, গাছ চা পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে। এটাকে পচন বলে। এর আগে এ রোগ ছিলনা। সার ও কীটনাশক দুটোই চাহিদা মত পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি বলেন আজ ৩১ টাকার কাঁচা চা পাতা ২২ টাকা কেজিতে নেমেছে।
স্থানীয় করতোয়া চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুর আলম বলেন, দালালদের দৌরাত্নের কারনে দাম বেড়েছিল। তারা কিনে রাখে ২-৩ টাকা বেশী দামে বিক্রি করে থাকে। তিনি আরো বলেন কাচাঁ পাতার মান আগের মত নাই‘ কারন হিসেবে তিনি বলেন যখন কদর বেড়ে যায় সেটির প্রতি আর মনোযোগ থাকেনা।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন সার ও কীটনাশকের অভাব নাই ‘ চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ আছে। তিনি কাচাঁ চা পাতার পচন দমন বিষয়ে বলেন এ বিষয়ে চা চাষীদের সচেতন হতে হবে এবং ছত্রাকনাশকের ব্যবহার সঠিক ভাবে করতে হবে ‘এতে ক্ষতি কমানো অবশ্যই সম্ভব।
পঞ্চগড় চা বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী এ জেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে চা বাগান রয়েছে ৭ হাজার ৬১৭টি। তার মধ্যে অনিবন্ধিত ৫ হাজার ৮৭৪টি। চা প্রক্রিয়াজাত চা কারখানা রয়েছে ২৯টি । এ বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি কেজি।
দার্জিলিং ভ্যারাইটি চা চাষ পঞ্চগড়ের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সাড়া ফেলেছিল। চা চাষীরা যে যার মতো করে সমতলে চা চাষ করে আসছিল। তা আজ নানা কারনে সমস্যার সম্মূখীন। এ বিষয়ে সরকারের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়াার দাবী করেছেন চা চাষীরা।
এসডি/