লামার অরক্ষিত সীমানায় পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের দাপট!


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, ১০ই এপ্রিল ২০২৩


লামার অরক্ষিত সীমানায় পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের দাপট!
পাহাড়

বান্দরবানের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল উপজেলা লামা। এই  উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন উপজেলার পূর্ব-উত্তর এলাকা রূপসীপাড়া,লামা সদর, গজালিয়া ও সরই ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে রুমা,থানচি ও আলীকদম উপজেলা। এই সীমানা অঞ্চলটি দূর্গম ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা ৩৫ কিলোমিটার পাহাড়ি সীমানা পুরোই রয়েছে অরক্ষিত।


লামা উপজেলা সদর থেকে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মংপ্রু পাড়া,লামা সদর ইউনিয়নের বৈল্যারচর পাড়া, গজালিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি পাড়া এবং সরই ইউনিয়নের লুলাইং বাজার পর্যন্ত গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা রয়েছে। যে এলাকায় নেই সেনা বা সরকারী অন্য কোন বাহিনীর ক্যাম্প। এতে করে ফাঁকা পেয়ে এই অঞ্চলটি দখলে নিয়েছে পাহাড়ে থাকা কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। 


স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে ,এই জনপদে জেএসএস, ইউপিডিএফ ও এমএনপি সহ বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। যাদের হাতে এই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। লামার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন এর ৯নং ওয়ার্ড আলীয়াং বাবু পাড়া থেকে শুরু করে পোপা, ঘিলাপাড়া, ছোট বমু, বড় বমু হয়ে লেমুপালং ও লুলাইং পর্যন্ত নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় ও ব্যবসা-চাষাবাদের জন্য যাওয়া কিছু বাঙ্গালী লোকজন ছাড়া তেমন কোন বসবাস নেই এই এলাকাটিতে। এখানে গাছ,বাঁশ, ফল ও সবজি ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যাবসা করে।


যদিও বিষয়টি ওপেনসিক্রেট। এছাড়া প্রতি বছর মার্চ - এপ্রিল-মে এই তিন মাসে তামাক পোড়ানো ও বিক্রি মৌসুমে তামাক চুল্লী ঘিরে জমে উঠে চাঁদা সংগ্রহের হিড়িক। রূপসী পাড়া ইউনিয়নের দুর্গমে তামাক চাষী মো.কবির উদ্দিন,লামা সদর পোপা এলাকার জয়নাল মাঝি,কুতুব উদ্দিন বলেন,তামাক পোড়ানো শুরু হলে তামাক চুল্লী প্রতি পাহাড়ি গ্রুপকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বিকাশ-নগদ-রকেটে মাধ্যমে এই টাকা পাঠাতে হয়। যেহেতু আমরা দুর্গমে চাষাবাদ করি তাদের টাকা না দিলে নিরাপদে থাকতে পারিনা। চাঁদা না দিলে শুরু হয় খুন, অপহরণ ও নির্যাতন নিপীড়ন। 


রূপসীপাড়া ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংমুখ ও গজালিয়া ইউনিয়নের লুলাইং বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন,মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা অন্য কোন দেশে আছি। যেখানে নেই কোন সরকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ।


এই জনপদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কম। কখনও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সেনা-পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। ততক্ষণে নিরাপদে সরে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রশাসন চলে গেলে আবার ফিরে আসে তারা। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে দিনেদুপুরে চলে চাদাঁবাজি।


বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়,গত ১০ বছরের এই অরক্ষিত অঞ্চলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে নিরিহ ব্যবসায়ী ও চাষী মিলে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একাধিকবার পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলি হয়েছে। ঝড়েছে প্রচুর তাজা প্রাণ। চাঁদার জন্য প্রায় ১৬ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। টাকা দিয়ে দফারফা করে ছাড়া পেয়েছিলেন তারা।


রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা ও সরই ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস কোম্পানী বলেন,নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে ৩৫ কিলোমিটার সীমানার সুরক্ষায় সেনা ক্যাম্প বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।


লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘লামা উপজেলার পূর্ব সীমানায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনে নিরাপত্তা বাড়বে। তিনি সরকারী উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করে অনেকবার চিঠি লিখেছেন।


অরক্ষিত সীমানার বিষয়ে লামা ও আলীকদম সেনা জোনের দায়িত্বরত এক অফিসার বলেন, সেনাবাহিনী সরকারী সিদ্ধান্তে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করছে। সেনা ক্যাম্প বর্ধিত করার বিষয়টি সরকারের উপর মহলের বিষয়। আমরা নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে।


আরএক্স/