শ্রীনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, ১০ই এপ্রিল ২০২৩


শ্রীনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা
মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা

শ্রীনগরে আসন্ন বৈশাখী মেলা উৎসবকে সামনে রেখে মৃৎ শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় পাল বাড়িতে চলছে হাতি, ঘোড়া, গরু, খরগোস, টিয়া, কবুতর, পুতুল, বিভিন্ন ধরণের ফল আকৃতির ব্যাংক ও শিশুদের নানান প্রকার খেলনাসহ অন্যান্য মাটি সামগ্রী তৈরীর কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে বৈসাখী মেলা ও ঈদ পরবর্তী মেলা গুলোর জন্য নানার রঙে সেঁজেছে খেলা গুলো। 


পরিবারের নারী ও পুরুষরা এসব মাটি সামগ্রী তৈরীর বিভিন্ন কাজকর্ম করে দিনপাড় করছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের পাল বাড়িতে বৈশাখের মেলা ঘিরে হরেক রকমের মাটির খেলনা সামগ্রী তৈরী করা হয়েছে। 


হাতে তৈরীকৃত এসব মাটি সামগ্রী আগুনে পুড়িয়ে রং করার কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তন্তর পাল বাড়িতে ৪টি পরিবারের বসবাস। এখানকার নারী-পুরুষ সবাই মাটির জিনিসপত্র তৈরীর অভিজ্ঞতা রয়েছে। লক্ষ্য করা যায়, মৃৎ শিল্পীরা আঠালো মাটির দিয়ে হাতে তৈরী করছেন বিভিন্ন প্রকার খেলনা সামগ্রী। 


নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটির এককেটি বস্তু তার চিরচেনা রূপ পাচ্ছে। রং-তুলির আচরে এসব সামগ্রী আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। এ সময় সমীর পাল বলেন, মাটির খেলানাসহ হাড়ি-পাতিল তৈরী করেন। আসছে বৈশাখী মেলা ও ঈদকে সামনে রেখে এগুলো তৈরী করা হচ্ছে। ৫ কন্যা সন্তানের জনক সমীর পাল বলেন, এ পেশায় টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। 


অন্য কোন আয় রুজীর পথ নেই তার। বিভিন্ন মেলা-উৎসব অনুষ্ঠানে বিক্রির জন্য মাটির খেলনা তৈরী করছেন। শিখা রানী বলেন, পাইকারী দরে এসব মাটির খেলনা সামগ্রী বিক্রি করেন তারা। ৫ থেকে ৫০ টাকা মূল্যের মাটির বিভিন্ন খেলনা তাদের কাছে। পাইকাররা বাড়িতে এসে এগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন। 


সমু পাল ও শোভা রানী দম্পতি বলেন, আগের মত মাটি সামগ্রীর কদর নেই। এগুলোর চাহিদা কমে যাচ্ছে। সংসারে বিকল্প কোন আয়ের উৎস নেই। তাদের ৪ কন্যা সন্তানের সংসারে কোন পুত্র সন্তান নেই। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় পূর্ব-পুরুষদের পেশাটি ধরে রাখার চেষ্টা রাখছি। ষোলঘরের শ্রী যতন পাল জানান, প্লাষ্টিক ও মেলামাইনের যুগে মাটির জিনিসপত্র বিলিন হতে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। 


এদিকে সরকারের সুদৃষ্টি না থাকলে মৃৎ শিল্পটি একেবারেই হাড়িয়ে যাবে। এছাড়া উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, বাঘড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার হরপাড়া, শ্রীনগর বাজার সংলগ্ন পাল বাড়িতে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এখনও মৃৎশিল্পটি ধরে রেখেছেন। 


এসব পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ বিভিন্ন পূজার প্রতীমা ও মিষ্টির হাড়ি, দইয়ের খোড়াসহ সাংসারিক কাজকর্মে ব্যবহারযোগ্য নানান ধরণের মাটির তৈরীর উপকরণ বেচাকেনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর আগে মহামারি করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্প পরিবারগুলো নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন পাড় করেছেন। 


হাঁসাড়ার অরুন পাল, মদন পাল, লক্ষণ পাল, সুরন্ড পাল জানান, পূর্ব পুরুষদের সবাই এই পেশায় কাজ করে গেছেন। তারা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ৪২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। 


আরএক্স/