ডালপালা মেলে বিস্তার শুরু করেছে বালিয়াড়ির কারিগর খ্যাত সাগরলতা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৩


ডালপালা মেলে বিস্তার শুরু করেছে বালিয়াড়ির কারিগর খ্যাত সাগরলতা
কুয়াকাটা সৈকত

রমজান উপলক্ষে তিন সপ্তাহ ধরে কুয়াকাটা সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটক কমে গেছে । ফলে সাগরের ঢেউয়ের গর্জন ছাড়া সৈকতে আর কোনো কোলাহল নেই। বালিয়াড়িতে জনকোলাহল না থাকায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়ার দল। ডালপালা মেলে বিস্তার শুরু করেছে বালিয়াড়ির কারিগর খ্যাত সাগরলতাও।


বিজ্ঞদের মতে, সৈকতের ক্ষয়রোধ এবং শুকনো উড়ন্ত বালুরাশিকে আটকে বালুর পাহাড় বা বালিয়াড়ি তৈরি করে সাগরলতা। আর সাগরে ঝড়-তুফান বা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকে উপকূলে ঠেকিয়ে রাখে বলে বালিয়াড়িকে বলা হয় সৈকতের রক্ষাকবচ। কিন্তু পর্যটনশিল্প বিকাশে দূষণের শিকার হয়ে গত প্রায় দুই দশকে কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িগুলো প্রায়ই হারিয়ে গেছে। এতে বিপন্ন হয়ে গেছে বালিয়াড়ির কারিগর সাগরলতাও। তাই ভাঙনের শিকার হয়ে সমুদ্রতীরের ভূমি বিলীন হয়ে গেছে সাগরগর্ভে। রমজান উপলক্ষে মাস জুড়ে পর্যটক আগমন না থাকায় থেমে গেছে সৈকতের বালিয়াড়িতে নিত্যদিনের কোলাহল। এতে পদচিহ্নহীন বালিয়াড়িতে স্বকীয়তায় বিস্তার ছড়াচ্ছে সাগরলতা।


গঙ্গামতি কাউয়ার চর কুয়াকাটার জাতীয় উদ্যানের পাশে দেখা মিলছে ‘রেলরোড ভাইন’ নামের এ চমত্কার উদ্ভিদের। সৈকতে প্রকৃতির রাজ্যে এমন পরিবর্তনকে ইতিবাচক দাবি করে পরিবেশবিদেরা বলছেন, এসব প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সৈকতের কিছু অংশ প্রকৃতিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। সাগরের নির্জনতায় যেহেতু এগুলো এখন ফিরে আসছে, সরকারের উচিত পর্যটক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া। পরিবেশ রক্ষায় আরো মনোযোগী হলে কুয়াকাটা  সৈকত বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে। এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। সাগরলতার ইংরেজি নাম রেলরোড ভাইন, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় রেলপথ লতা। একটি সাগরলতা ১০০ ফুটেরও বেশি লম্বা হতে পারে।


প্রকৃতি প্রেমীরা বলেন, সাগরলতা সৈকতের সুস্থতার পরিচায়ক। এগুলো বালুকে ধরে রেখে বালিয়াড়ি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে, তাই এই উদ্ভিদকে সৈকতের বাস্তুতন্ত্রের অগ্রপথিক বলা হয়। মানুষের পদচিহ্ন বন্ধ হওয়ায় এগুলো আবার ফিরে আসা খুবই আশাব্যঞ্জক। আমাদের উচিত হবে সৈকতের সুস্থতা ধরে রাখতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া। সাগরলতার বালিয়াড়ি তৈরির পাশাপাশি গোলাপি-অতিবেগুনি রঙের ফুলে সৈকতে এক অন্য রকমের সৌন্দর্য ছড়াত।  সাগরলতা সৈকতের বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া ও পাখির টিকে থাকার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র কলাপাড়া উপজেলা শাখার, সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন প্রতিবেশ নষ্ট করছে, এটা বর্তমান প্রকৃতি বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতি রক্ষা করেই আমাদের পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে।’


আরএক্স/