মোংলায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, ৫ই মে ২০২৩
মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিকারের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
অভিযোগকারী শিক্ষক সুলতান মাহবুব আলম শহীদ জানান, মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র হালদার বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানা ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্মের শিক্ষক ৬বছর আগে অবসরে গেলেও তার পরিবর্তে এখনও পর্যন্ত নতুন কোন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেননি প্রধান শিক্ষক। এমনকি খন্ডকালীন কোন মুসলমান শিক্ষকও নেননি এখনও পর্যন্ত। এতে ওই ধর্মের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং ফির নামে ৪০জনের কাছ থেকে প্রায় ২লাখ ৪০হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন ও নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে প্রধান শিক্ষক তার নিজের আত্মীয়স্বজনদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন। তার ছেলেকে কম্পিউটার ল্যাব সহকারী ও ভায়রার ছেলেকে দপ্তরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও অসংখ্য ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রায় ১০লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র হালদার।
তিনি অভিযোগে আরও বলেন, বিদ্যালয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের শিক্ষকদের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তার নিজ একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আমি নিজেই বেতন স্কেল প্রাপ্তিতে ৫০হাজার টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা এর আগে বিদ্যালয় তহবিল থেকে বছরে দুইটি বোনাস পেতাম, তিনি আসার পর তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলে অর্থ জমা বন্ধ রাখেন তিনি। পরবর্তীতে পুনরায় বছরখানেক ধরে সেটি চালু করলেও ওই বিদ্যালয়ের তহবিলে কোন টাকা জমা করেননি তিনি। বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা তিনি নিজের ইচ্ছামতই খরচ করে থাকেন। রুপালী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি শিক্ষকদের বিরুদ্ধাচারণ করে থাকেন বলেও জানান অভিযোগকারী শিক্ষক শহীদ।
তিনি আরও বলেন, এ সকল বিষয়ে কোন শিক্ষতেরা আপত্তি তুললে তাকে গালিগালাজসহ চাকুরিচ্যুত করা হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননা।
অভিযোগকারী মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুলতান মাহবুব আলম শহীদ বলেন, প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র হালদারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও ধর্ম/বর্ণ বিদ্বেষের প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপমন্ত্রী (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়) হাবিবুন নাহার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএ আনোয়ার উল কুদ্দুস বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র হালদার বলেন, এ বিষয়ে আমি পরে কথা বলবো। এখন ব্যস্ত আছি, এ বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএ আনোয়ার উল কুদ্দুস বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এখন যেহেতু এসএসসি পরীক্ষা চলছে তাই পরীক্ষার পর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, বুধবার অভিযোগটি পেয়েছি, বিষটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।