ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিল ইজারাদার, হুমকিতে বোর ফসল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিল ইজারাদার, হুমকিতে বোর ফসল

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশায় জামখালা হাওরের বাঁচাডুবি বিলের ইজারাদার নীতিমালা অমান্য করে বিল শুকিয়ে মৎস্য নিধনের জন্য কেটে দিলো ফসল রক্ষা বাঁধ। বাঁধটি কেটে দেওয়ায় এখন পুরো জামখলা হাওরটিই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে কয়েক শত হেক্টর বোরো ফসল। 

হাওরের কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকার প্রতি বছর হাওরের ফসল রক্ষায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে আসছেন। কিন্তু আমাদের হাওরের একটি প্রভাবশালী অসাধু চক্র হাওরের বিলটি সাবলিজ এনে বিল শুকিয়ে মৎস্য নিধনের জন্য আমাদের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধটি কেটে বিলের পানি শুকাচ্ছেন। বাঁধটি ভেঙে দেওয়ায় আমরা কৃষকরা আতঙ্কে আছি। তবে এই বাঁধ কেটে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউয়িনের জামখালা হাওরের বাঁচাডুবি বিলে গিয়ে দেখা যায়, সেঁঁচের কারণে বিলের পানি শুকিয়ে তলদেশে চলে গেছে। বিলের অনেক অংশে ইজারাদারের লোকজন মাছ ধরে খলায় নিয়ে আসছেন। পুরো বিলে যেনো মাছের উৎসব দেখা দিয়েছে। এভাবেই নীতিমালা অমান্য করে চলছে এই চক্রের মৎস্যনিধন কর্মকাণ্ড। 

ধরমপুর সলফ গ্রামের মধ্যখানে গিয়ে দেখা যায়, এই জলাশয়ের পানি একটি সড়ক কেটে বের করা হচ্ছে। সড়কটি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে নিমার্ণ করে পানি উন্নয়ন র্বোড। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এই খালটি একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। এর পর থেকেই বাঁধটি ধরমপুর সলফ গ্রামর লোকজন সড়ক হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু ইজারাদাররা খালের বাঁধটি এ বছর কেটে দিয়ে তাদের বিল শুকিয়ে মৎস্য আহর করছেন। এ জন্য এই হাওরের কৃষকরা শঙ্কায় আছেন। যে কোন সময় এই হাওরের আগাম বন্যা এলে খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।

উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, জামখালা হাওরের বাঁচাডুবি জলমহালটি ১৪২৬ বাংলা হতে ১৪৩১ বাংলা সনে ৬ বছর মেয়াদে দরগাপাশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ নামের একটি সংগঠনটি ইজারা প্রাপ্ত হয়। সমিতির নিবন্ধন নং-১৩৯৯।

সমিতির সভাপতি দরগাপাশা গ্রামের মো. ছানু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ মিয়া। অর্ন্তবর্তীকালীন ৩ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. সমসর উল্লা, সদস্য মো. আজির উদ্দিন ও মো. হুরমত উল্লা।
        
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধরমপুর, সলফ গ্রামের অনেক কৃষকরা জানিয়েছেন, এই বিলটি সাবলিজে এনেছেন লাউগাং (উমেদনগর) গ্রামের জানার মিয়া, সাবেক মেম্বার হারুন মিয়া, সলফ গ্রামের ইমরাজুল খান, শাহান মিয়া, কুতুব উদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। তারা খুবই প্রভাবশালী। তারা প্রভাবখাটিয়ে আমাদের ব্যবহারের এ সড়কটি কেটে দিয়েছে। এখন গ্রামের লোকজন চলাচল করতে পারছেন না। সেই সাথে আমাদের হাওরের ফসল নিয়ে আমরা আশঙ্কায় আছি। যে কোন সময় আমাদের হাওরের ফসল পানিতে থলিয়ে যেতে পারে। প্রশাসনের কেউ কোন ব্যবস্থা নেননি। 

তারা আরো জানিয়েছেন, এই বিলটির ইজারাদার দরগাপাশা মৎম্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ছানু মিয়া ও  সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ মিয়া থাকলেও মূলত তারা কিছুই না। এদের নামে সমিতি থাকলেও সমিতির মহাজন দরগাপাশা গ্রামের তৌহিদ খুরশিদুজ্জামান চৌধুরী নাজমুল।

দরগাপাশা গ্রামের তৌহিদ খুরশিদুজ্জামান চৌধুরী নাজমুল জানান, এই বিলটি আমার চাচাতো ভাইরা ইজারা এনেছেন, আমি তাদেরকে বিল ফিসিং করতে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। সমিতি গঠন থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত আমার অবদানেই এই সমিতি চলমান আছে। মূলত এই বিলটি ফিসিং করছে ভাগিদাররা। এতো বড় বিল একা ফিসিং করা যায় না বিদায় সমিতির লোকজন ভাগিদার হিসেবে এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করেছেন। বিলের পানি শুকিয়ে মাছ আহরণের জন্য বাঁধটি কেটে দিয়েছি। এই খালদিয়েই আমাদের বিলের পানি শুকাতে হয়। তবে আমি কারো অনুমোতি নেইনি। 

সাবলিজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এতো বড় বিল একা তো ফিসিং করা যায় না, তাই এলাকার কিছু মানুষকে ভাগিদার বানিয়েছি। এখন মূলত তারাই ফিসিং করছেন।

বিলের ইজারাদার দরগাপাশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ছানু মিয়া জানান, বিলটি ইজারা এনে ভাগিদারদের দিয়ে ফিসিং করাচ্ছি। বাঁধ কেটে না দিলে আমাদের বিলের মাছ ধরা যাবে না, তাই ভাগিদাররা বাঁধ কেটে দিয়েছেন। 

দরগাপাশা গ্রামের তৌহিদ খুরশিদুজ্জামান চৌধুরী নাজমুল আমাদের কে অফিসিয়াল সহযোগিতা করেন, তিনি বিল ইজারা পেতে অফিসের কাজে সহযোগিতা করেন ও আমাদের টাকার প্রয়োজন হলে তিনিই আমাদেরকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। ভাগিদার সম্পৃক্ত করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের সমিতিতে লোকজন দিয়ে ফিসিং করা যায় না। তাই দুই তিন গ্রামের লোকজনকে বিলের ভাগিদার দেওয়া হয়েছে। তারাই আমাদের বিলটি ফিসিং করছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কোন সুযোগ নাই। আমি ইউএনও স্যারকে অবহিত করেছি। উনার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী মাহবুব আলম জনবাণীকে জানান, এই বাঁধটি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো যাতে করে এই এলাকার মানুষের হাওরের ফসল আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু একটি অসাধু চক্র তাদের জলমহাল ফিসিং করার জন্য আমার এই বাঁধটি কেটে দিয়েছে। এই ব্যাপারে উপজেলা কমিটি পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান জনবাণীকে জানান, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলীকে বলেছি, বিলের ইজারাদারকে ডেকে এনে তাদের সাথে কথা বলার জন্য বলেছে। এই বাঁধটি বিলের ইজারাদাররা বেঁধে দিতে হবে। তবে কোন কারণে তারা বাঁধটি মেরামত না করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মেরামত করা হবে। 

এসএ/