অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্যের দ্বিগুন দাম বাড়লো
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, ৮ই মে ২০২৩
মৌলভীবাজারে এক মাসের ব্যবধানে বাজারগুলোতে বেড়েছে চাল, সয়াবিন তেল, দুধ, চিরা, আটা, ময়দা, চিনি ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। বেড়েছে সকল ধরনের সবজি, মাছ মাংসেরও দাম। খুচরা বাজারে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা করে বেড়েছে এসব পণ্যের দাম।
এছাড়া, সব ধরনের চালের বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এতে বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এভাবে বৃদ্ধি পেলে অনাহারে থাকতে হবে বলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা জানান।
বিশেষ করে চাল, তেল, ডাল, আটা, ময়দা, চিরার পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম চড়া থাকায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ।
এদিকে, জেলার উপজেলার বাজারগুলোতে দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তা মানছেন না। ফলে প্রতিদিন পণ্যের দাম নিয়ে পড়তে হয় দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
শুক্রবার (৫ মে) জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকালে বাজার করতে এসেছেন অনেক ক্রেতা। বিক্রেতাদের সঙ্গে দামাদামি করে কিনছেন শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। দামাদামি করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না ক্রেতারা৷ দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে চাহিদার তুলনায় কম বাজার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবকয়টি সবজি আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দ্বিগুন। এক মাস আগে কাঁচা মরিচের প্রতি কেজি ৪০ টাকা ছিল বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, টমেটো (এলচি) প্রতি কেজি ২০ টাকা তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, দেশী লাউ প্রতি পিস ৩০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লেবু প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জিঙ্গা প্রতি কেজি ২০ টাকা ছিল তা ৪০ টাকা, পুইশাক ২৫ টাকাই আছে, ঢেরস ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, দেশী আলু ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, পরাসের বিচি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, সিমের বিচি ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, শসা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আদা ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বাধা কপি কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও ফুল কপি ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগীর দাম ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা ও লাল (কক) ৬৫০ টাকাই রয়েছে।
খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা বিক্রি, প্রতি লিটার পাম ওয়েল ১২৬ থেকে বেড়ে ১৪৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল পূর্বের দামেই বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি চিনি ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা, মসুরী ডাল ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা, দেশী আলু ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, রসুন ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, আটা ও ময়দা কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে, শুকনা মরিচের গুরা ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ কেজি, হলুদ আগের দামেই ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।লবণ কেজিপ্রতি তিন টাকা বেড়েছে। ৫০ কেজি প্রতি বস্তা চালে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া মুড়ি ও সকল ধরনের বিস্কুটে দাম বেড়েছে।
দিনমজুর সাদেক ও নিমাই বলেন, ‘সবকিছুতে দাম বেড়েছে। কিভাবে সংসারের খরচ চালাবো বুঝতে পারছিনা। প্রতিদিন যে টাকা রুজি করি সেই টাকা দিয়ে বাজারে কিছুই হয়না।’
কমলগঞ্জ উপজেলার খুচরা বাজারের ব্যবসায়ী তুহিন মিয়া বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করে অনেক বিপদে পড়েছি। ব্যবসায় আগের চেয়ে অনেক বেশি পুঁজি বেড়েছে কিন্তু লাভ বাড়েনি। পাইকারি বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতা সমির পাল বলেন, ‘দাম দিয়ে মাল কিনতে হয় আবার দুই টাকা থেকে তিন টাকা খুচরা বাজারে লাভ করে ছেড়ে দেই।’
মুরগী ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ও সুমন চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমরা পাইকারদের কাছ থেকে মাল যে দামে ক্রয় করি তার থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে বিক্রি করি। অতিরিক্ত দাম রাখি না কারো কাছ থেকে।’
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান করে জরিমানা করছি। তাছাড়া যেসব পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং যে পণ্যগুলা ন্যায্যমূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
আরএক্স/