প্রেমের কারণেই শাহাদাতকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে ৩ বন্ধু


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


প্রেমের কারণেই শাহাদাতকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে ৩ বন্ধু

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রেমঘটিত কারণেই ওয়াল্টন কর্মচারী শাহাদাত হোসেনকে (২৪) হত্যা করেছে তার তিন বন্ধু। ক্লুলেস শাহাদাত হত্যার ছয় মাস পর মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ তিন বন্ধুই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। 

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, ধামরাইয়ের আমড়াইল গ্রামের আক্কাছ আলীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, শুকুর আলীর ছেলে আবু তাহের ও মিজানুর রহমানের ছেলে সবুজ হোসেন।

জানা গেছে, ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমড়াইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের একমাত্র ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৪) পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়া ওয়াল্টন কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট শাহাদাত হোসেনের বিয়েরদিন ধার্যছিল টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাইত গ্রামে। কিন্তু বিয়ের ১১ দিন আগেই কালিয়াকৈর তার কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিখোঁজ হন শাহাদাত হোসেন। এরপর ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার। পরে বিয়ের দুইদিন আগে ১২ আগস্ট আমড়াইল গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় শাহাদাত হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ধামরাই থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করেন। এরপর প্রায় দেড় মাস পর গত ২২ সেপ্টেম্বর শাহাদাত হোসেনের মৃত্যুর ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পান ধামরাই থানা পুলিশ। 

প্রতিবেদনে জানা যায়, শাহাদাত হোসেন আত্মহত্যা করেনি, তাকে শ্বাসরোধে ও পিটিয়ে হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামরাই থানার এসআই সেকেন্দার আলী সন্দেহজনকভাবে একই গ্রামের শাহাদাত হোসেনের বন্ধু জাহিদুল ইসলাম জাহিদকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে জাহিদ হত্যার কথা স্বীকার না করায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। এরপর জাহিদ কিছুৃদিন পরই জামিনে ছাড়া পায়।
   
পরে র‌্যাব ওই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল মঙ্গলবার রাতে সাভারের আশুলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর শাহাদাত হত্যাকান্ডের মূলহোতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (২২) তার বন্ধু আবু তাহের (২৪), সবুজ হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।
 
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাদ দিয়ে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, শাহাদাত হোসেন একই গ্রামের তার বন্ধু জাহিদুল ইসলামের প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম করে তাকে বিয়ে না করে গত ১৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাইত গ্রামে এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিষয়টি জাহিদুল মেনে নিতে না পারায় তার অন্য বন্ধুদের নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর গত ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে জাহিদুল ফুসলিয়ে তাস খেলার কথা বলে ধামরাইয়ের আমড়াইল এলাকার একটি বাসায় দুইদিন আটকে রেখে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে জাহিদ চর-থাপ্পর মারে এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারে। এ সময় তাহের শাহাদাতের মাথা চেপে ধরে বসে ছিল এবং অন্যান্যরা হাত পা ধরে ছিল। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে শাহাদাতের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত করে। তারপর তারা শাহাদাতের লাশ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানযোগে ধামরাইয়ের আমড়াইল মনু মিয়ার পরিত্যক্ত ভিটায় গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখে, যাতে করে এলাকার লোকজন জানতে পারে শাহাদাত আত্মহত্যা করেছে।

তবে বুধবার শাহাদাতের বাবা কোহিনুর ইসলাম বলেন, আমার ছেলে কারও সঙ্গে প্রেম করেনি। ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েই শাহাদাতকে ওরা হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসি চাই।

র‌্যাব বুধবার বিকেলে শাহাদাত হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকেই ধামরাই থানায় হস্তান্তর করেছে বলে জানিয়েছেন ধামরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান। 

এসএ/