মোংলায় বাসিন্দা সোয়া দুই লাখ, আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৬৮ হাজার


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, ১১ই মে ২০২৩


মোংলায় বাসিন্দা সোয়া দুই লাখ, আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৬৮ হাজার
আশ্রয়কেন্দ্রে

সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলা উপজেলার সোয়া দুই লাখের অধিক বাসিন্দার বিপরীতে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১০৩টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৮ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। বন্দর ও পৌর শহরের তুলনায় অধিক দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার চাঁদপাই, চিলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন। 


পশুর নদীর পাড়ে এ ইউনিয়নগুলো হওয়াতে দুর্যোগে এসব এলাকার বাসিন্দারাই বিভিন্ন সময়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাফর রানা বলেন, মোংলায় মোট ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। 


যেগুলোর সবই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার। তার মধ্যে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে রয়েছে ৮৪টি আর পৌরসভায় রয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এখানকার ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫১ জনের মোট জনসংখ্যার বিপরীতে ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৬৮ হাজার। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি। এ কয়টিতে দুর্যোগকালে আশ্রয় নিতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষ। তবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পৌর শহরে লোকজনের আশ্রয় নিতে তেমন সমস্যায় পড়তে হয় না। কারণ, শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যক্তিগত, সরকারি-বেসরকারি অফিসের দ্বিতল ভবন রয়েছে। 


আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সেসব ভবনে শহরের বাসিন্দারা আশ্রয় নিতে পারবেন। তবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় উপজেলার দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে পশুর নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ও জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা সবসময় বেশি থাকে। পশুর নদী ঘেঁষা চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর-কাইনমারী থেকে চিলা ইউনিয়নের জয়মনিরঘোল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় ২২ হাজার মানুষের বসবাস। 


তার মধ্যে চিলা ইউনিয়নের কানাইনগর ও দক্ষিণ কাইনমারী অধিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ। চিলা ইউনিয়নের চিলাবাজার, আমতলা, কলাতলা, সিন্দুরতলা ও জয়মনিরঘোল তার চেয়েও বেশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বিগত সময়ে এসব এলাকার মানুষই ঝড়-ঝাপটায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বাজুয়া খেয়াঘাট, শেলাবুনিয়া, বিদ্যারবাহন ও বুড়িরডাঙ্গা বাজার এলাকা পশুর ও মোংলা নদীর পাড় ঘেঁষে হওয়ায় দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নটি। 


চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৩০ হাজার। আর মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১১টি। তাতে আশ্রয় নিতে পারবেন সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মানুষ। বাকিদের আশপাশের পাকা বহুতল ভবন, মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় আশ্রয় নিতে হবে।


চিলা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন জানান, ৫০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে তার ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি। আর তার ইউনিয়নের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো ৫, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড, যা পশুর নদীর পাড়ে অবস্থিত। 


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, মোংলাতে যে পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তা জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে ঝড়ের সময়কাল দীর্ঘস্থায়ী হলে এখানে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দুযোর্গকালীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের থাকারও সমস্যা হয়ে থাকে। 


কারণ প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্র স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার, তাই সেখানে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ নানাসামগ্রী থাকে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-পুরুষের গাদাগাদি অবস্থানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুযোর্গকালে অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের এ বিষয়গুলো মাথার রাখতে হবে। মোংলা পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. রহমান বলেন, পৌরসভায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। 


আর পৌরসভায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি, যাতে ধারণক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষের। তবে শহরে অনেক বহুতল ভবন থাকায় পৌর এলাকার লোকজনকে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়াতে এরইমধ্যে এ উপজেলায় সিপিপির ৬৬টি ইউনিটের প্রায় ১৪০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আগেভাগে সরিয়ে আনা হবে। 


দুর্গতদের জন্য খাবার মজুত করা হয়েছে। এছাড়া নিম্নচাপের কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগের প্রস্তুতি স্বরূপ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এরপর সতর্ক সংকেত যখন তিন নম্বর দেওয়া হবে তখন লোকজনকে সতর্ক করার পাশাপাশি জানমাল রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রমুখী করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরএক্স/