গুগল-উইকিপিডিয়ায় চাকরির প্রলোভনে ফল বিক্রেতার ফাঁদে শতাধিক নারী

গুগল ও উইকিপিডিয়াতে টাইপিস্টের চাকরির কথা বলে নারীকণ্ঠে প্রলোভন দেখাত এক তরুণ। এ প্রলোভনে পড়া শতাধিক নারীর ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে গোপনে ভিডিও ধারণ করতেন তিনি। এরপর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতেন।

এমন অভিযোগে আল ফাহাদ (১৯) নামের এক তরুণকে আটক করেছে র‍্যাব।

করোনা মহামারির কারণে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করা সহজ ছিল না। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করত ফাহাদ।

গ্রেপ্তার ফাহাদের কাছ থেকে একটি ক্যামেরা, দুটি ক্যামেরার লেন্স ও একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড, একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকেই অপরাধীরা ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রতারকরা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিংয়ের’ নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ জানিয়েছে, অসংখ্য নারীকে প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অল্প বয়সী নারীদেরকে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেমন গুগল-উইকিপিডিয়াতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। এসময় চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের (চাকরিপ্রার্থী) প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেয়া হতো। এভাবে অনেক চাকরি প্রত্যাশীকে আকৃষ্ট করত।

অন্যদিকে মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল’ করা হবে বলে জানানো হতো।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, প্রার্থীদের (নারীদের) বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপস-এর মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত। এসময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিওকলে মেডিকেল পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হত। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

তিনি আরও বলেন, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যাশীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নারীকন্ঠে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তা পরিচয় দিত।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছে বলে সে জানায়। পরবর্তীতে নিজেই ওই কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতো। পুনরায় ওই অ্যাপস-এর মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করত।

যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজ ছিলনা, সেক্ষেত্রে গ্রেপ্তার ফাহাদ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করত।

প্রলোভোনের বিষয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, শতাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছে ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়া হতো। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়মিত ব্ল্যাকমেইলিং করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সে একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে তার বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে একটি ফলের দোকানে বসত।

ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে 'অনলাইন জব বিডি (online Job BD) ' ও ' পার্ট টাইম জব ইন ঢাকা (Part Time Jobs in Dhaka)' এবং পার্ট টাইম জব ইন বাংলাদেশ ('Part Time Jobs in বাংলাদেশ') নামে গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়।

এভাবে গ্রুপে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চাকরি দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছিল। প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু নারীদের ভুয়া আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করতো বলেও জানান র‍্যা কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।

 ওআ/