বিলপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী রিকশা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২২শে মে ২০২৩


বিলপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী রিকশা
প্যাডেল রিকশা

সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল রিকশা। বিগত ৫ বছরের মাথায় এমন পরিবর্তন সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অটোরিকশা সুফল বয়ে আনলেও দুর্ঘটনা থেমে নেই। অটোরিকশা দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ অঙ্গহানিও ঘটেছে হরহামেশাই। তারপরও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে অটোরিকশা যেন যানবাহনের প্রধান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 


এখন তেমন শোনা যায় না হারিয়ে যাওয়া প্যাডেল রিকশা টুং টাং বেলের শব্দ, যার প্যাডেল ঘুরিয়ে চলত কয়েক শ শ্রমজীবী মানুষের সংসার। একসময়ে মৌলভীবাজার জেলার ছোটখাটো জায়গায় যাতায়াতের একমাত্র যানবাহন ছিল এই প্যাডেল রিকশা। আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে।


ব্যাটারিচালিত টোটো ও অটোর বদদৌলতে হারিয়ে যেতে বসেছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের এই পুরোনো ঐতিহ্য। প্যাডেল রিকশা তুলনায় কম ভাড়া ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায় ব্যাটারিচালিত টোটোয় চেপে। ফলে চাহিদা একেবারেই কমে গেছে রিকশা। তবুও কয়েকজন রিকশাচালক অভাবের সঙ্গে লড়াই করেও পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।


যান্ত্রিকতার এই আধুনিক যুগে পেশিশক্তির আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। সময় ও টাকা বাঁচাতে এসব যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল বেশির ভাগ মানুষ। এমনিতেই সারা দিন বসে থেকেও ভাড়া জোটে না, তার ওপর রাজ্যে বিধিনিষেধের জেরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের রিকশাচালকরা। অনেক সময় দুবেলা খাবারটুকু ঠিকমতো জোটে না; মেলে না সরকারি সাহায্যও। এভাবেই অভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রিকশাচালকরা।


অটোরিকশাচালকরা জানান, তারা কোনো কাজ-কর্ম করতে পারছেন না বলেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে কোনো রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আসার পর প্যাডেল রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেও এসব এলাকার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিকশা। 


বর্তমান সময়ে দেখা দেখা যায়, মৌলভীবাজার জেলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যে হাতেগোনা দু-একটি প্যাডেল রিকশা দেখা যায়। যে দু-একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়তো অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। 


অথচ একসময় জেলার আনাচে-কানাচে দেখা যেত প্যাডেল রিকশা। আর এই রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চলত কয়েক শ মানুষের। কিন্তু বর্তমান সময়ে গোটা জেলাজুড়েও খুব একটা দেখা মেলে না প্যাডেল রিকশার। যেসব প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচল করে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। তারা তাদের পেশিশক্তি দিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেন না যাত্রীদের।


কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার ও মুন্সীবাজার রোডে রিকশাচালক নিধু বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে রিকশা চালাই। এখনো রিকশা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ৭ থেকে ৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয়ও না। মানুষ এখন আর রিকশায় উঠতে চান না। আমাদের অটোরিকশা কেনার টাকা নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে প্যাডেল রিকশাই চালাতে হয়।’


কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ১০ থেকে ১৫ বছর পূর্বে বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে বের হলে বেশির ভাগ রিকশাতেই ঘুরে বেড়াতাম। তা ছাড়া সেই সময়ে এত মোটরসাইকেল বা ছোটখাটো মোটরযানের ব্যবহার ছিল না।


আরএক্স/