মাচার ব্যবহার ছাড়াই বরবটি চাষে আশানুরূপ উৎপাদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:০১ অপরাহ্ন, ২৩শে মে ২০২৩
বরবটি চাষের কথা ভাবতেই প্রথমে সামনে আসে জমি নির্ধারণ, মাচা তৈরি বা অন্যান্য প্রস্তুতির কথা। এসবের কারণে অনেক কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বরবটি চাষে।
তবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খলিলপুরের তরুণ কৃষক রায়হান মাচা বা খুঁটি ছাড়াই বরবটি চাষ করে সাফল্যের চমক দেখিয়েছেন। আর রায়হানের এই সাফল্য দেখে এই জাতের বরবটি চাষে আগ্রহী উঠেছেন এলাকার অনেক কৃষকই।
সিলেট বিভাগে এই প্রথম মাচা বা খুটি ছাড়াই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বামন বা খাটো জাতের বরবটি চাষে সাফল্য এসেছে। উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের ২২ বছরের যুবক রায়হান আহমেদ শখের বশবর্তী হয়ে এই প্রথম মাচা বা খুটি ছাড়াই খাটো জাতের বরবটি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। ইয়ার্ড লং বিন জাতের বরবটির গাছে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন চলে এসেছে। প্রতিটি বরবটির ওজন প্রায় ২০ থেকে ২৫ গ্রাম। গাছের দৈর্ঘ্য গড়ে ২৮-৩০ ইঞ্চি। একেকটি গাছে বরবটি ধরে ৩৮ থেকে ৪০টি।
শ্রীমঙ্গলের তরুণ কৃষক রায়হান আহমেদ বলেন, লাল তীর কোম্পানির কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এর পরামর্শে আমি বীজ সংগ্রহ করে এই প্রথম এটুকু জায়গায় বপন করি। এই বরবটি খুবই উন্নত জাতের এবং বেশ ভালোই ফলন এসেছে। আমি ভাবি নাই, নতুন এই জাতের বরবটির বীজ বপন করে এমন ফলন হবে। আশাকরি কৃষক ভাইয়েরা খাটো জাতের এই বরবটি চাষে অনেক লাভবান হবেন।
লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিসনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, কোনো প্রকার মাচা তৈরি বা আলাদা খুটি ব্যবহারের ঝামেলা বিহীন হওয়াতে অতি সহজেই এটি চাষ করার সুবিধা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সিলেটের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে এই জাতটির ব্যাপক চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন ফসলের সাথী ফসল হিসেবেও এটি চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে। প্রতি শতকে ৮০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। এছাড়াও ছাদকৃষির জন্য এই জাতটি খুবই উপযোগী। এটি যেকোনো বাসার ছাদে টবে চাষ করে পরিবারে সবজির চাহিদাও সহজে মেটানো সম্ভব হবে।
সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের মৃত মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. রায়হান আহমেদ। খলিলপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা তরুণ কৃষক রায়হানের বয়স সবে মাত্র ২২ ছুঁই ছুঁই। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষক পিতার সাথে ছোটবেলা থেকেই শখে শখে কৃষি কাজে লেগে থাকতো। মা, বাবা, দুই ভাই ও এক বোনসহ ৬ সদস্যের সুন্দর সাজানো সংসার ছিলো রায়হানের। ২০১৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই পরিবারের সকল কাজের দ্বায়িত্ব চলে আসে রায়হানের উপর।
ছোটবেলায় থেকেই বাবার সাথে মাঠে কৃষি কাজে সহায়তা করা থেকেই কৃষির প্রতি ভাব ও আলাদা আসক্তি জন্মে রায়হানের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকা ঘিরেই রয়েছে রায়হানের পারিবারিক বলয়। ধান চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ তাদের বংশানুক্রমে ঐতিহ্য। খলিলপুর গ্রাম জুড়েই রয়েছে রায়হানের বংশের পরিধি। কৃষক পরিবারের সদস্য হিসেবে রায়হানও গর্ব অনুভব করে।
রায়হানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা বংশানুক্রমে কৃষি পরিবার। তাই নিজেকে একজন কৃষক পরিচয় দিয়ে গর্বিত বোধ করি। আমাদের পরিবারকে কৃষি পরিবার বললেও ভুল হবেনা। পিতার মৃত্যুর পর লেখাপড়ার পাশাপাশি পুরোদমে কৃষি কাজে জড়িয়ে পরায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। এটি আমাকে সবসময় পীড়া দেয়। কৃষিতে আমি আরও অবদান রাখতে চাই। এজন্য সরকার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রতি আমার আহ্বান, যথা সময়ে এবং যথাযথভাবে কৃষকের পাশে দাড়ান। আমাদের মতো তরুণ কৃষকরাই কৃষির বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের উন্নয়নের মাইল ফলক সৃষ্টি করবে।
জেবি/ আরএইচ