তরুণদের ভাবনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:১২ অপরাহ্ন, ৪ঠা জুন ২০২৩


তরুণদের ভাবনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস
ছবি: জনবাণী

মানবসভ্যতার বৃদ্ধি এবং বিকাশের একমাত্র উপায় পরিবেশ প্রকৃতি। আমাদের জীবন যতটা গুরুত্বপূর্ণ , ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করা। পরিবেশ এবং মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতি রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় এবং পরিবেশ সচেতনতা জোরদার করতে প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশ এ দিবস পালন করে। আমরা পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নে অগ্রসর হলেই আমাদের সামগ্রিক পূর্ণতা নিশ্চিত হবে। সেজন্য প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান সর্বমহলের। এবারের পরিবেশ দিবসে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন। 


প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে: ১৯৭৪ সাল থেকে ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটাকে ইকো দিবস ও বলা হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন  প্রতিপাদ্য বিষয় ও কর্মসূচির মাধ্যমে ৫ই জুন পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে (Solutions to Plastic Pollution)”। বর্তমানে প্লাস্টিক ও পলিধিন ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এগুলোর বর্জ্য পদার্থ আমাদের পরিবেশের উপাদান মাটি,পানি এবং বায়ুকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে,যা জীব জগতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং প্লাস্টিক ও পলিথিন মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সভা-সেমিনারের মাধ্যমে জনগণকে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আমার আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আজ থেকেই প্লাস্টিকের ব্যবহার না বলি। আসুন সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি “সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ।


কে. এম. বিপুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


প্রতিটি প্রাণ জেগে উঠুক:  প্রকৃতির কোলে লালিত হওয়া শিশু মস্তিস্কে পরিবেশ সম্পর্কে প্রথম অভিষেক ঘটে তাদের পাঠ্যবইয়ে। একজন জীবের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের ভুমিকা অপরিহার্য। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত নিজেরাই আমাদের পরিবেশকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছি। বিদায় নিয়েছে পরিবেশ বান্ধব অনেক প্রজাতি, যাদের হয়তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। চারদিকে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ,শব্দদূষণ, বৃক্ষনিধন,অপরিকল্পিত নগরয়ন,বেহিসাবি কলকারখানা বেড়েই চলছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি সে প্রশ্ন এখন চিন্তার বিষয়। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা এখন ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার বিকল্প নেই।পরিবেশ আন্দোলন এখন সময়ের দাবী। পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষার্থে পরিবেশবাদী সংগঠনের সাথে সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। পরিবেশের চিরচেনা রুপ ফিরিয়া আনতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী এবং কার্যকারী পদক্ষেপ। প্রতিটি প্রাণ জেগে উঠুক একটি স্বাস্থ্যসম্মত  পরিবেশ সৃষ্টির প্রত্যয়ে যেখানে কৃত্রিমতা বর্জিত প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়া যাবে।


আরও পড়ুন: গুচ্ছ পরীক্ষার হলে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসে আটক প্রেমিক


আজমেরি কণা, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


বৃক্ষকে বাঁচাই,উষ্ণায়ণ কমাই: পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্ক নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতি আমাদেরকে তার সবকিছু দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে; বড় অবদান হলো অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে নানানভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। গাছপালা, বন, পাহাড়, নির্বচারে ধ্বংস করার ফলে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে যার ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে পরিবেশ উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ অতি মাত্রায় বৃক্ষ নিধন। বৃক্ষ নিধনের কারণে জলবায়ুর ও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর দুই মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে,এতে আগামী ২০৫০ সালের দিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১ মিটার বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। অতিরিক্ত বৃক্ষ নিধন করায় দেখা দিয়েছে অনাবৃষ্টি, বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত দাবদাহ। প্রাকৃতিক দুর্যোগসৃষ্টি সহ ঝড়,নদী ভাঙ্গন,ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা দেখা দিচ্ছে বেশি। অতি বন্যায় চাষের জমি ডুবে যাচ্ছে, ঝড়ের ফলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এছাড়া বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। তাই সরকারি-বেসরকারি ভাবে জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ রক্ষার বিষয় অবগত করা প্রয়োজন। বেশি বেশি গাছপালা রোপন, খাল -বিল খনন করা, জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করা, স্কুল -কলেজে সেমিনার করার পাশাপাশি নিয়মিত বৃক্ষ মেলার আয়োজন করার সময় এখন আমাদের তরুণদের।


সঞ্চিতা রিতু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে:  দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব আমাদের চারিদিকের পরিবেশের উপর স্থায়ী হচ্ছে দিনে দিনে। এ ব্যাপারে সরকারসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া জরুরী। পরিবেশ রক্ষায় আইন ও পদ্ধতির প্রণয়ন জোরদার করতে হবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনের তীব্রতা সবল রাখাই আমাদের কাজ। দেশের মানুষের উন্নয়নের আকাঙ্খা ও মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পরিবেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশের দূষণ কে এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে আগামীর দিনগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সামাজিকভাবে আমাদের সম্পর্ক যেমন পারস্পারিকের মধ্যে বজায় থাকে, তেমনি পরিবেশের মূল্যবোধও তেমন। পরিবেশ যেমনি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দিচ্ছে তেমনি পরিবেশকেও আমাদের দেওয়ার আছে।


আরও পড়ুন: অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলেন গণিত বিভাগের ড. আনিছুর


সুমাইয়া ইফরাত প্রথমা, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ


সামগ্রিক পূর্ণতায় বাঁচবে প্রকৃতি ও দেশ:  মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা এখনও অনেকটাই অনগ্রসর। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির অদূরদর্শীতা অনেকাংশেই পরিবেশকে অসুস্থ বানিয়ে দিচ্ছে। পরোক্ষভাবে আমরাই আত্মঘাতী হয়ে উঠেছি। মানব বর্জ্য সমূহ পরিশোধন করে পুনঃব্যবহার যোগ্য করতে হবে। বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড় ধ্বংস করে কোন প্রতিষ্ঠান বা কাঠামো তৈরী না করার জন্য কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটি সরকারি হোক বা ব্যক্তিগত। পরিবেশের সাথে মানুষের যে আন্তঃসম্পর্ক এবং মিথস্ক্রিয়া থাকা উচিত তা আমাদের অতিকৃত্রিমতার কারণে প্রায় বিপরীতে মেরুতে চলার মতই হয়ে গেছে।আমরা পরিবেশ বলতে কৃত্রিম দালানকোঠা, প্লাস্টিকের ফুল-গাছপালা আর এসির বাতাসকেই ধরতে শুরু করেছি। ফলে আমাদের মনো-দৈহিক সমন্বয়হীনতা দিনকে দিন প্রগাঢ় হচ্ছে। পরিবেশ এবং মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। আমরা পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নে অগ্রসর হলেই আমাদের সামগ্রিক পূর্ণতা নিশ্চিত হবে। বাঁচবে প্রকৃতি, বাচঁবে দেশ।


সৌরভ হাসান, শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ, পাবনা


পরিবেশ রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থায় গুরুত্ব আরোপন প্রয়োজনঃ   আমরা প্রকৃতিরই অংশ। প্রকৃতি-পরিবেশের ক্ষতিই আমাদের ক্ষতি। পরিবেশে বড় একটি প্রভাব ফেলছে কার্বন  মনোক্সাইড(CO)। রসায়নবিদদের পরীক্ষালব্ধ তথ্য মতে,  গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড (বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন গ্যাস যা বাতাসের তুলনায় হালকা) প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণের ফলে তাৎক্ষণিক ভাবে মানুষের শরীরে পৌঁছায়। রক্তের পাশাপাশি মস্তিষ্কেও হানা দেয় এটি।তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের বিচার শক্তি লোপ পায়। মূলতঃ পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। তবে,যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া থেকে কার্বন মনোক্সাইড  নির্গমন রোধ করা কঠিন কিছু না। অন্তদাহ ইঞ্জিনের আংশিক পরিবর্তন ও অন্য কোনো শক্তির উৎস সন্ধান,ইঞ্জিনে উচ্চ তাপমাত্রার চেম্বার যুক্ত করে CO নির্গমন রোধ করা যায়। একই সাথে মোটর গাড়ির জ্বালানীর বিকল্প উদ্ভাবন করতে হবে।মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি দরকার বিজ্ঞানসম্মত(বিশেষ করে পরিবেশ রসায়ন) ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। তাহলে একদিকে যেমন কমবে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ থেকে পৃথিবী  কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।


রেজাউল করিম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


জেবি/ আরএইচ/